যায়যায়কাল ডেস্ক: বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার ও জামিন না দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত সরকার।
মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়, বিষয়টি তারা ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে’ দেখেছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধসহ আট দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসা চট্টগ্রাম পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
এরপর রাত থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে জনসভার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাশসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ওই মামলা হয়। ওই মামলার বাদী চট্টগ্রাম মহাননগরীর চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খানকে অব্যাহতি দিয়েছে বিএনপি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, লালদীঘি মাঠের সমাবেশের দিন নিউ মার্কেটে জাতীয় পতাকার ওপর ‘সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের’ গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা স্থাপন করে দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রের ‘অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার শামিল’।
‘দেশের সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা প্রদর্শন ও দেশের অখণ্ডতাকে অস্বীকার করার মানসে’ এভাবে পতাকা অবমাননা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলার এজাহারে বলা হয়, “জাতীয় পতাকার ওপরে ধর্মীয় পাতাকা উত্তোলন করে আসামিরা দেশের ভেতর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশকে অকার্যকর করার রাষ্ট্রদ্রোহ কাজে লিপ্ত আছে।”
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে। জামিন আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার পর কারাগারে চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ যাতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করতে পারেন, সে বিষয়ে আদেশ চান তার আইনজীবীরা। আদালত এ বিষয়ে কারাবিধি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
চিন্ময়কে আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময়ও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সমর্থকরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আদালত প্রাঙ্গণে চিন্ময়ের প্রিজন ভ্যান আটকে রাখে। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের সরায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন হামলার পরে এই ঘটনা ঘটল। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটের পাশাপাশি প্রতিমা ও মন্দিরে চুরি, ভাংচুর ও অবমাননার কিছু নথিবদ্ধ ঘটনাও রয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত দাবি উত্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দুর্ভাগ্যজনক।
ধর্মীয় নেতা চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার রাতে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে সনাতনীদের বিক্ষোভে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে বাধা দেয় একদল লোক।
সনাতন সম্প্রদায়ের অভিযোগ, তাদের ওপর লাঠি-সোটা হাতে হামলা চালিয়েছে রাজনৈতিক কর্মীরা। আর পুলিশ বলছে, ‘সাধারণ জনগণ’ তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছে।
চিন্ময় দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদকারীদের ওপর ‘আক্রমণের’ ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, হিন্দু এবং সব সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকারও যার অন্তর্ভুক্ত।