বৃহস্পতিবার, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তীব্র তাপদাহে হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে রোগী

কৌশিক চৌধুরী, হিলি: বৈশাখের তীব্র তাপদহে দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী হাকিমপুর হিলি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বৈশাখের তীব্র গরমের কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে। অপর দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট এর কারণে ভর্তি রোগীসহ বহির বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

গত ১৫ দিনে ৭০-৮০ জন রোগী ভর্তি থাকছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। ডায়রিয়া রোগীদের স্যালাইন, সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকসহ নার্সরা।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডের প্রায় সব বেডে রোগীরা ভর্তি হয়ে আছে। এছাড়াও গরমে নানা রোগে আক্রান্ত ৫০ শ্যয্যার হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬০ জন রোগী। বেড না পেয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন ভর্তি রোগীরা।

অপর দিকে আজ হাসপাতাল এর রেজিস্ট্রার মোতাবেক বহির বিভাগে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন বয়সের ৩৪৬ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১১০, মহিলা ১৭৩ জন ও শিশু রয়েছে ৬৩ জন।

হাসপাতালের রেকর্ড অনুসারে, সোমবার ১২ মে হাসপাতালে নতুন ভর্তি সহ ৬০ জন ভর্তি ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েক জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছেড়েছেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত নার্স মাহফুজা খাতুন জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ৩/৪ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। কিন্তু গত কয়েক দিনে হঠাৎ করেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ডায়ারিয়া আক্রান্ত হয়ে নতুন করে ৮-১০ জন করে রোগী ভর্তি নিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা রয়েছেন। হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তন ও বৈশাখের তীব্র গরমের কারণে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।গত ১৫ দিনে প্রায় ৭০-৮০ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেঝেতে ভর্তি হয়ে থাকা রোগী হাসনা বেগম বলেন, গত ২ দিন আগে হঠাৎ করে আমার ছেলের বমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। বেড না থাকায় মেঝেতে বেড তৈরি করে চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন বর্তমানে অনেকটা সুস্থ।

অপর আর একজন রোগী বলেন, বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে ইরি ধান কাটা মারায় এর কাজ করছি। হঠাৎ গতকাল থেকে আমার পেটের ব্যাথা ও পাতলা পায়খানা। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন ও চিকিৎসা নেওয়ার পরে বর্তমানে একটু সুস্থ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হওয়া শিশুর অভিভাবক বলেন, গত দুই তিন আগে আমার এবং আমার বাচ্ছার শ্বাসকষ্ট সমস্যার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা সেবা গ্রহনের পরে বর্তমানে দুজনেই সুস্থ আছি।
হাকিমপুর হিলি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইলতুতমিশ আকন্দ বলেন, বৈশাখ মাসের তীব্র গরমে হাসপাতালে বেশ কিছু দিন থেকে ডায়রিয়া রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তন ও তীব্র গরমের কারণে মা, শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া রোগে ভুগছে বলে মনে করছি। তবে আমাদের হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন পর্যাপ্ত থাকায় এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসাল্টেন্ট, সার্জন, মেডিকেল অফিসার সহ মোট ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে চিকিৎসক রয়েছেন ২ জন। ফলে ভর্তি ও বহির বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেশ কিছু দিন থেকে মাষ্টার রোলে কিছু নিয়োগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। চাহিদা মোতাবেক চিকিৎসক পেলে সেবার মান আরও বেড়ে যাবে। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণে বেড না থাকায় অনেক সময় রোগীরা মেঝেতে বেড করে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন।

আমাদের পরামর্শ হচ্ছে এই গরমে ভাজা পোড়া খাবার কম খেতে হবে, খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ভালো ভাবে ধৌত করতে হবে এবং অবশিষ্ট খাবার ভালো ভাবে ঢেকে রাখতে হবে। তীব্র গরমে বেশি বেশি পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। সেই সাথে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে এসে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ