শুক্রবার, ১লা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাসে ৫ লাখ টাকার পান বিক্রি করেন ইউসুফ

দিপংকর রায়, বিশেষ প্রতিনিধি : দিনাজপুর বিরলের কৃষিতে সফলভাবে যুক্ত হয়েছে পান চাষ। উপজেলার একমাত্র পানের বরজটি গড়ে তুলেছেন বিরল উপজেলার ১নং আজিমপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্যামপুর কাঁঠালতলী এলাকার বিদেশ ফেরত মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। পানের বরজ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি।

পানের বড়জটি ২০১৮ সালে প্রাথমিকভাবে চাষ শুরু করেন তিনি। অবৈধ শ্রমিক হিসেবে দুবাইয়ে জেল খেটে সম্বলহীন হয়ে দেশে ফেরত আসেন। মোহাম্মদ ইউসুফ আলী দিশেহারা হয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। এই অবস্থায় রাজশাহী পুঠিয়ায় নানাশ্বশুরের বাড়িতে ঘুরতে যান তিনি। সেখানেই পানের বরজ দেখে দৈনন্দিন অভাব মেটাতে পান চাষ করার আগ্রহ তৈরি হয়। এই পান আবাদ করলে প্রতিদিন ৫ থেকে শ টাকার পান বিক্রি কিরে অন্তত চলবে তার অভাবের সংসার।

এই চিন্তা নিয়ে ২০১৮ সালে রাজশাহী থেকে চারা সংগ্রহ করে প্রাথমিকভাবে ১৮ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই পান চাষ করে লাভবান হলে পরের বছর ৮ শতাংশ, এ বছর তা বাড়িয়ে মোট ৩৫ শতাংশ জমিতে পানের বরজ করে এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন তিনি প্রতিমাসে প্রায় ৫ লাখ টাকার পান বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক জাতের পান আবাদ হলেও তিনি মিঠা পান আবাদ করেছেন। মিঠা জাতের পানে কোন প্রকার ঝাল অনুভূত হয় না বলে বাজারে চাহিদাও বেশ ভালো।

বিরল উপজেলা কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠা এই পানের বরজটিতে গিয়ে দেখা যায়, এক পরিচ্ছন্ন সবুজের সমারোহ। প্রতিটি পান গাছের সাথে চিকন বাঁশের গজাল দিয়ে সারি সারি করে সাজানো। শতভাগ আগাছা মুক্ত সবুজ পাতা (পান) গুলো গাছে দোল খাচ্ছে প্রতিটি গাছের ফোরে ফোরে শোভা ছড়াচ্ছে পান পাতা।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ১৩ টি উপজলার মধ্যে একমাত্র হাকিমপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গ্রামে রয়েছে এই পানের বরজ। যা অতি নগন্য। এই বরজ ব্যতিত বলতে গেলে জেলার মধ্যে এটিই একমাত্র বড় পানের বরজ।

পান বরজের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী যায়যায় কালকে জানান বিরলের এই আবহাওয়ায় পান বরজের গড়ে তোলার পেছনে ও বর্তমানে সফলতার কথা। অবৈধ শ্রমিক হিসেবে বিদেশে জেল খেটে প্রায় শুন্য হাতে দেশে ফিরে পানের বরজটির কল্যানে স্বাবলম্বী হয়ে তিনি এখন দুই তিন দিন পর পর ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেন। পান বরজটির কল্যাণেই তিনি ইতিমধ্যে করেছেন ইটের পাকা বাড়ি, কিনেছেন কয়েক বিঘা জমি। সাথে বর্গাও নিয়েছেন আরো কয়েক বিঘা জমি।

হাস্যোজ্জল কন্ঠে তিনি জানান, এই অঞ্চলের আবহাওয়ায় পানের বরজ করতে পারবেন তা তার কল্পনাতেই ছিল না। তবে তিনি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করলেন না বিরল কৃষি অফিসার মোস্তফা হাসান ইমামকে। বিরল কৃষি বিভাগ এই পানের বরজটিতে সার্বিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করায় আজ পরিপূর্ণ।

তিনি জানান, এলাকায় তার মত কেউ যদি এমন পানের বরজ করতে চান, চারাসহ সকল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন তিনি। এমন গল্পের মাঝেই পাইকার এসেছেন পান নিতে। তারা জানালেন কাছাকাছি পানের বরজ হওয়াতে অনেক সুবিধা হয়েছে তাদের। নইলে অন্য জেলা থেকে পান সংগ্রহ করে পানের দোকানগুলোতে সাপ্লাই করতে অনেক অসুবিধা পোহাতে হয়। বরজটি কাছাকাছি হওয়ায় কম দামে ও মান যাচাই করে পান সংগ্রহ করতে পারছেন। তারা এই বরজ থেকে ৬৪ টি পান মান ভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে কিনছেন বলে জানালেন।

বিরল উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফা হাসান ইমাম যায়যায় কালকে জানান, এই অঞ্চলটি প্রায় ফসলের জন্য উপযুক্ত। দেশে কয়েক জাতের পান পাওয়া যায়। উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী যে পান আবাদ করেছেন এটা মিঠা পান। বাজারে এই পানের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এই পানের আবাদও ছড়িয়ে যেন দেওয়া যায়। বিরল কৃষি বিভাগ সব সময় সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *