
শাহীন রেজা টিটু, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : নবীনগরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) অধীনে ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প ২০২১ সালে কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এই কাজের সুফল পাচ্ছে না নবীনগর পৌরবাসী।
এ নিয়ে নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে। নবীনগর পৌরসভার সেই বহুল আলোচিত প্রকল্পটি দুর্নীতির বড় উদাহরণে পরিণত হয়েছে। পাইপের ছিদ্র দিয়ে যেন আড়াই কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হয়। এরপরই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মাঠে নামে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা।
তথ্য যাচাইয়ে জানা যায়, প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যা ফিলিপাইন ভিত্তিক ইসলামী ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) । ইতোমধ্যে প্রায় ৯০% কাজ সম্পন্ন হয়। ঠিকাদার এখন পর্যন্ত চলতি বিল কেবল ৩০% বিল উত্তোলন করতে পেরেছেন বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
জেলার জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, এখন শুধুমাত্র মিটার সংযোজনের কাজ বাকি রয়েছে। যা জুন মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। পুরো অর্থের কোনো অংশই গায়েব হয়নি। এমনকি দুর্নীতির সুযোগও নেই। কাজের অগ্রগতি, বিল উত্তোলনের পরিমাণ ও তদারকি প্রক্রিয়াও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
প্রকল্পটি ২০২১ সালে এক বছরের মেয়াদে শুরু হলেও কাজ এখনও শেষ হয়নি কেন— এ প্রশ্নে তিনি জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে প্রায় ৯ মাস কাজ বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে ঠিকাদারের প্রতিনিধিরা মাঠে আসছেন এবং আবার কাজ শুরু হচ্ছে।
অন্যদিকে পৌরবাসির অভিযোগ, পাইপলাইন বসানো হলেও এখনো ঘরে পানি পৌঁছায়নি। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে। তারা দ্রুত প্রকল্প সম্পন্ন করে নিরাপদ ও আর্সেনিকমুক্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
নবীনগর পৌর এলাকার প্রায় ৭০ হাজার মানুষের প্রত্যাশিত এই প্রকল্প নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, প্রকল্পের পুরো অর্থ আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। তা সত্ত্বেও অভিযোগের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত হোক, আমরাও সেটাই চাই।
প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী) আরিফ আনোয়ার বাতেন বলেন, বিদেশি সংস্থার প্রকল্প আমরা(নবীনগর পৌরসভা) টেন্ডার ও দেয়নি, ঠিকাদারের কাজের বিল ও পৌরসভা পরিশোধ করে নাই। তাই নবীনগর পৌরসভার এখানে দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নাই।
এদিকে পৌরবাসির পক্ষে অনেকেই প্রকল্পে ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি সত্যিই কোনো গাফিলতি বা দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত এই প্রকল্পটি সম্পন্ন করে আমাদের নিরাপদ পানি সরবরাহ দিতে হবে।