
পীরগঞ্জ (রংপুর): রংপুরের পীরগঞ্জে সিন্ডিকেটের কারনে কোল্ড স্টোরগুলোতে শত চেষ্টা করেও বড় মজিদ পুরের কৃষক লাল মিয়া, মজিদ মিয়া, বড় ঘোলার সাধীন আকন্দ, চতরা ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম, রাশিদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, কোল্ড স্টোরে রাখতে পারেনি নিজেদের উৎপাদিত আলু। কোন্ড স্টোর আলু রাখার ইচ্ছায় কোল্ড স্টোর থেকে মাত্র ৬ থেকে ৭ শত গজ দুরত্বে কয়েকদিন আগে আলু উঠিয়ে জমিতে বস্তা ভর্তি রেখে পাহাড়ায় ছিলেন তারা। কোল্ড স্টোরে আলু রাখতে না পেরে নিজের উপরে নিজেরাই ক্ষোভ ঝেড়েছেন, উপায় না পেয়ে লোকসানে জমি থেকেই আলু বিক্রি করছেন তারা। ব্রাকের স্টিক জাতের আলু বীজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে সংগ্রহ করে রোপন করেছিলেন। উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে কেজি প্রতি ১৫/১৬ টাকা।
উপজেলার আলু খ্যাত এলাকা হিসেবে পরিচিত রামনাথপুর ইউনিয়নের খেজমতপুর মৌজার বড় ঘোলা ও বড় মজিদপুর, শত শত একর জমিতে চাষকৃত আলু অধিকাংশ কৃষক এখন জমিতে বস্তা ভর্তি করে লোকসানে বিক্রিতে ব্যস্ত। জমি থেকে আলুর বস্তা খালি করা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় দিন রাত কাটছে কৃষকদের। এই এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা ব্রাকের স্টিক আলু চাষ করেছেন যা বর্তমানের ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। বড় ঘোলার কৃষক স্বাধীন আকন্দ জানান, এবারকার যে সিন্ডিকেটের অবস্থা অগ্রিম বুকিং দিয়ে রাখছে, আলু বর্তমানে কোন্ড স্টোরে রাখার পজিসন নেই। ওনারা বাহির থেকে আলু নিয়ে এসে আগে থেকে বুকিং দিয়েই কোল্ড স্টোর বন্ধ ঘোষনা করেছে। ব্রাকের আলু বীজ ক্রয়ে সিন্ডিকেট রয়েছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই বীজ ৮০/৯০ টাকায় মিলে। আমি কিনেছি ১১০ টাকা কেজিতে। কারন আমি সিন্ডিকেটের বাহিরে। তিনি অভিযোগ করে বলেন কোল্ড স্টোরে ভ্যানে করে আলু নিয়ে আসলে সেটা গ্রহন করে না। অথচ বড় বড় ট্রাকে আলু আসলে সেটা নিয়েই তারা ব্যস্ত। আলু হচ্ছে আমাদের প্রধান ফসল সেখানেই লোকসান, কৃষকের লোকসান বাঁচাতে সরকারি সহায়তা চান তিনি এবং আরো কোল্ড স্টোর বাড়ানোর দাবী জানান।
টুকনিয়া থেকে সাকিল দূর্বার গাড়ীতে ৯০ বস্তা বীজ আলু সংরক্ষনে এসেছেন শয়েকপুরের শান্তনা কোল্ড স্টোরে ওই কোল্ড স্টোরে বড়দরগার থেকে আনিছুর শ্যালো চালিত ট্রলিতে ভর্তি করে ৫০ বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন। আগের দিন বিকেলে আসলেও প্রায় ২০ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ আলু গ্রহন করেনি, উল্টো হঠাৎ ইফতারের পূর্ব মুহুর্তে তাদের সম্মুখে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় আলু গ্রহন শেষ। অথচ বস্তা প্রতি ৫০ টাকার অগ্রীম বুকিং স্লিপ রয়েছে তাদের কাছে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলায় ৪টি কোল্ড স্টোরের মধ্যে পীরগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ ও শাহ ইসমাঈল গাজী কোল্ড স্টোরেজে আলু ভর্তি যান বাহনের চিহ্ন নেই। তারা কয়েকদিন আগেই আলু নেয়া বন্ধ করেছে। অন্যদিকে শান্তনা কোল্ড স্টোরেজ ও কৃষিকল বীজ কোল্ড স্টোরেজের সামনে মহাসড়কে শত শত আলু ভর্তি শ্যালো চালিত ট্রলি, মহেন্দ্র, ট্রাক, ভটভটির দীর্ঘ লাইন।
কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে উপজেলায় এবার আবাদেরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড়গুন ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে আলুর। এবার সোয়া ২ লাখ টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার শান্তনা কোল্ড স্টোরেজ পীরগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ সাবেক তছির উদ্দিন, শাহ ইসমাঈল গাজী (রহ) কোল্ড স্টোরেজ ও কৃষিকল বীজ কোল্ড স্টোরেজ নামে চারটি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। এতে ৪৯ হাজার ৫০০ টন সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে উৎপাদিত বেশির ভাগ আলুই সংরক্ষনের অভাবে বাইরে থাকবে। ফলে কৃষক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতেই দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুরুতে আগাম জাতের দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা মন দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে,গত বছর প্রতি বস্তা আলু রাখার ভাড়া ৬০টাকা বাড়িয়ে ৩৮০ টাকা নিয়েছিল। এবারও ৫০ কেজির এক বস্তার ভাড়া পড়বে ৪২০ টাকা। এ বছর কেজি ৮ টাকা নির্দ্ধারন হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার করেনি কোল্ড স্টোর কর্তৃপক্ষ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত আলু বাড়িতেই সংরক্ষন করতে পারেন, সে জন্য সংরক্ষনের পদ্ধতি ও নিয়ম কানুন বর্ননায় লিফলেট বিতরণ চরছে। মাঠ কর্মীরা পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়াও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপনন সহায়তায় আলু সংরক্ষণে রামনাথপুরে ৫/৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতি ঘরে দুই থেকে আড়াই মন আলু সংরক্ষণ করা যাবে। ইতোমধ্য সারাদেশে ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণে সরকারি উদ্যোগ গৃহিত হয়েছে।