বুধবার, ৫ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৯শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

পূজার আনন্দ নেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত দীপ্ত’র পরিবারে

রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর: স্বপন কুমার দে ও মনিকা দে দম্পতি তাদের দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবছর দুর্গাপূজার উৎসব পালন করতেন।তারা কখনো ভাবেননি এবছর তাদের বড় ছেলেকে ছাড়া পূজা কাটাতে হবে। বড় ছেলে দীপ্ত দে নেই তা মনে করে ছেলের ছবি নিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন তারা। ছেলের ছবিগুলোই এখন তার মা-বাবার শেষ সম্বল। এগুলো দেখেন আর ছেলের জন্য চোখের পানি ফেলেন।তাই এবার তাদের ঘরে নেই পূজোর আনন্দ।

গত ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার ডাকা আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে মারা যান কলেজছাত্র দীপ্ত দে (২২)। তার পৈতৃক বাড়ি ভোলায়। তবে দীপ্তর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মাদারীপুর শহরে। বাবা স্বপন কুমার দে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুর কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন শহরের আমিরাবাদ এলাকায় ভাড়া বাসায় ছিলেন। দীপ্তর মৃত্যুর পর তারা শহরের জেলা পরিষদ সংলগ্ন হারুন সড়কে একটি বাসায় চলে গেছেন।

তাদের দুই সন্তানের মধ্যে দীপ্ত ছিলেন বড়। তার ছোট ভাই হেমন্ত দে (১৮) ঢাকায় মেডিকেল ভর্তি কোচিং করছে।

তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্গাপূজা শুরু হলেও দীপ্তর পরিবারে নেই কোনো আয়োজন। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ এসে তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। তবে কিছুতেই দীপ্তর মা-বাবা মনের কষ্ট দূর করতে পারছেন না।

দীপ্তর সঙ্গে কাটানো গত বছরের দুর্গাপূজার সময়টা মনে করে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তার মা মনিকা দে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আজ আমার ছেলেটা যদি বেঁচে থাকত! আনন্দ করত। নতুন জামা পরত। ঘরের সবাইকে মাতিয়ে রাখত। ভগবান, কেন ওরে আমার বুক থেকে কেড়ে নিলা?

দীপ্তর বাবা স্বপন কুমার দে ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “ছেলেটার বড় স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা শেষে বিদেশে গিয়ে চাকরি করতে চেয়েছিল।”

দীপ্ত মাদারীপুর সরকারি কলেজে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া সে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মাদারীপুর সরকারি কলেজের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সোহানা বিলকিস বলেন, দীপ্ত আমাদের সন্তান।ওর জন্য আমরা গর্বিত।দীপ্ত যেন চিরকাল আমাদের মধ্যে জীবিত থাকে, তার জন্য আমরা কলেজে ‘দীপ্ত দেয়াল’ নামে একটি স্থায়ী স্মৃতিচিহ্ন স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। কলেজে সবার এখন একটাই চাওয়া, ওর হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের উপযুক্ত বিচার হোক।

উল্লেখ্য, গত ১৮ জুলাই সকালে দলে দলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজনের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়।এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া করলে দীপ্তসহ অন্তত ৫০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে শকুনি লেকের পানিতে পড়ে যান। এতেই মৃত্যু হয় দীপ্তর। দীপ্তর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঐদিন দুপুরের পর থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় সহ বেশকিছু স্থাপনা ভাঙচুর করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ