শনিবার, ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফুলছড়ির বালাসীঘাটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিরব প্রশাসন

_upscale

ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি: গাইবান্ধার ফুলছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালাসীঘাট এলাকায় ও সৈয়দপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন ৩০-৬০ টি কাঁকড়া ও বালুবাহী গাড়ি দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহণ করছে একটি চক্র।

যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হুমকির মুখে পড়বে বলে সচেতন মহল মনে করছে। সেই সাথে নদী-তীরবর্তী গ্রামের মানুষের বসতভিটা ও আবাদি জমি ভাঙনের সম্মুখিন হয়ে পড়বে। প্রশাসনের লোকজন দেখেও না দেখার ভান করে থাকায় জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে বালাসীঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অবস্থা অনেকটা মগের মুল্লুকের মতো। নিজের ইচ্ছা মতো বালু উত্তোলন করছে। কিন্তু কারও যেন কিছু বলার নেই। এই বালু উত্তোলনের মাধ্যমে একদল মানুষ অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে, আর অন্যদিকে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়ছে। ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন করলে নদীর গতি পরিবর্তিত হয় এবং নদীর পাড় ভেঙে যায়। অর্থাৎ নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিরও ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গুটিকয়েক লোকের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এভাবে সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষতি রোধ করতে হবে। তাদের দাবি, অবিলম্বে এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি না, সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি চক্র বালাসীঘাটের অদুরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে শ্রমিক দিয়ে অবাধে বালু তুলে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা করছেন। আর বালু বিক্রির জন্য তারা সরকারের কাছ থেকে কোনো অনুমতিও নেননি। বালু ব্যবসায়ীর এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত নদী থেকে প্রতিদিন বালু তুলছে। এসব বালু বিক্রি করছে বিভিন্ন এলাকায়। বালু তোলার ফলে বালাসীঘাটে চলমান ফেরীঘাট টার্নিমালসহ প্রায় চারশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হুমকির মুখে পড়বে। এভাবে বালু তোলা অব্যাহত থাকলে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আসন্ন বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই শত শত বাড়িঘর ও ফসলী জমি ব্রহ্মপুত্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। আর প্রতিদিন কাঁকড়া (ট্রাক্টর) ও ট্রাকে করে অবৈধভাবে বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজনের জমি দখল করে কাঁকড়া ও ট্রাক গাড়ি চলাচলের অভিযোগও রয়েছে। বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সবাই প্রভাবশালী বলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ দিতেও সাহস পাচ্ছেন না। দিন-রাতে ৩০-৬০টি কাঁকড়া ও বালুবাহী গাড়ি দিয়ে নদী থেকে বালু পরিবহন করা হয়।

একটি কাঁকড়া প্রতিদিন ৭/৮ বার বালু পরিবহন করে। ২০০ টাকা হিসেবে একটি কাঁকড়া প্রতিদিন দেড় হাজার টাকার বালু পরিবহন করে। এক ট্রাক ৫০০ টাকা হিসেবে প্রতিদিন একটি ট্রাক ৫/৬ হাজার টাকার বালু পরিবহন করে। সে হিসেবে বালাসীঘাটের একটি স্থান থেকে প্রতিদিন বালু বিক্রি হয় লক্ষাধিক টাকার। এ হিসেবে শুধুমাত্র বালাসীঘাট থেকে ৭ মাস বালুর ব্যবসা চললে বছরে দুই কোটি টাকার উপরে বালু বিক্রি করে চক্রটি।

কিছুদিন আগে গাইবান্ধা-বালাসী সড়কে কাঁকড়া দিয়ে বালু পরিবহণে বাঁধা দেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এরপর বালু ব্যবসায়ীরা দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে আবারও বালুর ব্যবসা চালু করেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গাইবান্ধা-বালাসী সড়কে অন্তত ৫-৭টি স্থানে প্রভাবশালীদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা দিয়ে বালুর ব্যবসা চালাচ্ছে চক্রটি। এরমধ্যে বালাসীঘাটের চৌরাস্তা মোড়ে, একাডেমী বাজার মোড়ে, মদনেরপাড়া এলাকায় প্রতিরাতে বিভিন্ন অংকের চাঁদা তুলছেন। এছাড়াও পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা শহরের কিছু নেতাদের, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বালাসীঘাটে গিয়ে বালু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে আসার তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় লোক বলেন, ‘কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না বালু উত্তোলন। এ বালু দিয়ে বাড়ি, রাস্তাসহ বিভিন্ন ভরাট কাজের ব্যবসা করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে তার খেসারত দিতে হয় নদী ধারের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির। অনেক ঘর-বাড়ি ও গাছপালা যায় নদীগর্ভে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই বালু উত্তোলন করছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া আমাদের জমিতে চর জেগে উঠেছে, আর সেখান বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছি। তাছাড়া আমি একা না সবাইকে সম্পৃক্ত করেই বালু উত্তোলন করছি।’

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি (অ. দা.) জগৎ বন্ধু মন্ডল বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত আছে। তাছাড়া রাতে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে জানিয়েছি। খুব শিগগিরই বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *