বৃহস্পতিবার, ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

, এর সর্বশেষ সংবাদ

বিয়ে করে প্রতারণা করাই আনিতার পেশা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেহ ব্যবসা, মাদক কারবার, মদ্যপান, একাধিক বিয়ে, বিয়ের পর সম্পদ হাতিয়ে নেয়া সহ বহু অভিযোগ পাওয়া গেছে ৪৩ বছর বয়সী জেসমিন বেগম আনিতা (৪৩)’র বিরুদ্ধে। আনিতা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রতারণা করে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আনিতার প্রথম স্বামী নবীন শেখের সংসারে আরিফুল ইসলাম শিহাব (২২) নামে এক ছেলে ও সাদিয়া আফরিন শিমু (২০) নামে এক মেয়ে রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। তার বাবা কামরুজ্জামান। তিনি একজন দলিল লেখক ছিলেন। আর তার মা লুৎফা জামান পারুল বিদেশে থাকেন।

আনিতার সদ্য সাবেক স্বামী ও পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী শফিকুল আলম বাবুল যায়যায়কালকে বলেন, ‘২০২৪ সালের রমজান মাসে আনিতার সঙ্গে শিল্পকলায় আমার পরিচয় হয়। এরপর আমাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট আনিতাকে বিয়ে করি। বিয়ের পর আনিতাকে নিয়ে ১০৮২/১ মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায় ভাড়া ফ্ল্যাটে উঠি। সেখানে কিছুদিন একত্রে থাকি । এরপর জানতে পারি আনিতা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত। মদ্যপান ও মাদকসেবনের বিষয়েও জানতে পারি। এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে শুরু হয় ঝামেলা। পরে আনিতা তার আসল রুপ দেখায়। সে বিভিন্ন লোক দিয়ে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে গত ২৪ মার্চ রামপুরা থানায় আনিতার বিরুদ্ধে জিডি করি আমি।’

তিনি আরও জানান, জেসমিন বেগম আনিতা তার জিডি করার তিনদিন পর একটা ভুয়া কাগজে সিল মেরে গত ২৭ মার্চ কোনো কারণ ছাড়াই তালাক নোটিশ প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ সেখানে যে দুইজন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের বাস্তবে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। ভালো করে তালাকনামা দেখলে বুঝা যাবে এটি জাল। স্বাক্ষরের জায়গা ও সাক্ষীর কোনো ঠিকানাও নেই।
শফিকুল আলম বাবুল আরও জানান, আনিতার বিভিন্ন প্রকার কুকর্ম স্বচক্ষে দেখে ফেলায় ও তার কাছে বিভিন্ন প্রমাণ থাকায় এখন তাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন যে তাকে রাস্তা-ঘাটে পেলে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেসমিন বেগম আনিতার এনআইডি নাম্বার ২৮১২৯৮৩৪৯৮। পাসপোর্ট নম্বর ই-০৯৫২৮৭৯। এর আগেও তার বেশ কয়েকটি বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। তার প্রথম স্বামীর নাম নবীন শেখ। দুই সন্তান রেখে উনার সাথে ডিভোর্স হয় ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। এই নবীন শেখের সাথে ডিভোর্স হওয়ার পরে আরো দুইটি বিয়ে করেন আনিতা। তাদের একজনের নাম মো. সেলিম ও আরেকজনের নাম আলামিন । এই দুইজনের পরে ২০২২ সালের ১ মে আরও একজনের সাথে আনিতার বিয়ে হয়। তার নাম সাইদুর রহমান তুহিন। এই তুহিনকে মাদকসহ বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে তাকে নিঃস্ব করে ছয় মাসের মাথায় ডিভোর্স দেয় আনিতা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, টাকার বিনিময়ে অসংখ্য পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করেন আনিতা। কক্সবাজার, সাজেক ভ্যালি, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিজাত আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্টে রাত্রিযাপন করে আনিতা। শিল্পকলা একাডেমী, শান্তিনগর, বনশ্রী, রামপুরা, হাতিরঝিল, বেইলি রোড, রমনা, শহীদ মিনার, টিএসসিসহ আরো কিছু এলাকা থেকে খদ্দর জোগাড় করেন তিনি। বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়ে মদ ও অবৈধ মেলামেশা করা আনিতার নিত্যদিনের কাজ।

আনিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অবৈধ মেলামেশা করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তিনি । ওইসব ফ্ল্যাটে মাদক ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হন আনিতা। পরে এগুলো গোপনে ভিডিও ধারণ করেন । তার টার্গেট করা পুরুষদের থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। এই ধরনের অসামাজিক কাজের ভিডিও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আনিতার ফাঁদে পড়ে সোহেল মাহমুদ (৪০), আনিসুর রহমান (৪৫), হাতিরঝিলের বাবু (৩৫), মানিকগঞ্জের মামুন (৩৮) সহ আরো অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

২০২৩ সালের ৩ আগস্ট আনিতার বনশ্রী বাসা থেকে ( বাসা নং ১৬, রোড নং ২, ব্লক জি) দুইজন খদ্দর ও মাদকসহ আটক করে পুলিশ। খিলগাঁও থানায় আনিতার বিরুদ্ধে মদ এবং মাদকসেবনের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জেসমিন বেগম আনিতার একাধিক নম্বরে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ