রবিবার, ২৬শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,৯ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

ব্রাজিল যে কারণে পারেনি সস্তায় গরু মাংস পাঠাতে

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বাংলাদেশে অনেক সস্তায় গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিল ব্রাজিল; কিন্তু সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রয়োজনীয় সনদ (সার্টিফিকেশন) না পাওয়ার কারণে ব্রাজিল আর শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানি করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস।

বুধবার রাজধানীর বারিধারায় অবস্থিত একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত। আগামী ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলো শহরে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেড ইন বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৫’ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)।

বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানিতে আগ্রহ দেখিয়ে আসছিল ব্রাজিল। সর্বশেষ গত এপ্রিলে লাতিন আমেরিকার দেশটি প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (তখনকার বিনিময় হারে ৪৯৫ টাকা) বাংলাদেশে রপ্তানি করতে প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই মাসে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরা দুই দিনের সফরে ঢাকায় এলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছিল কূটনীতিক সূত্রগুলো।

ব্রাজিল যখন বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দেয়, তখন ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস কমবেশি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। রাজধানীর বাজারে এখন গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস জানান, ব্রাজিল বিশ্বের সব চেয়ে বড় গরু ও পোলট্রি মাংস উৎপাদনকারী দেশ। বিশ্বের অনেক মুসলিমপ্রধান দেশেই ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানির অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই অনুমতি নেই। ওই অনুমতি পাওয়ার জন্যই ব্রাজিল চেষ্টা করছিল বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

সনদ বা সার্টিফিকেশন পাওয়ার জন্য তিনি কীভাবে দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন, এ সম্পর্কেও কথা বলেন পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। তিনি জানান, তিনি প্রথমে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। সেখান থেকে তাঁকে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যেতে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যান ব্রাজিলের প্রতিনিধিরা।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘(তৎকালীন) মন্ত্রীর কাছে যাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বাংলায় লেখা কাগজপত্র দেখিয়ে নানা ধরনের নীতিমালার কথা জানান। তবে আমি এত নীতিমালা বুঝিনি। এককথায় যেটা বুঝেছি তা হলো, তাঁরা অনুমতি দেননি। তবে বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। আশা করছি শেষ পর্যন্ত অনুমতি পাওয়া যাবে।’

শুধু দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নয়, ব্রাজিল বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। কৃষি, ওষুধশিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নানা খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্রাজিল ও বাংলাদেশ পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত বলেন, কৃষি–বাণিজ্যে তাঁর দেশের অবস্থান অনেকটা পাওয়ার হাউস বা শক্তিকেন্দ্রের মতো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্রাজিল থেকে অভিজ্ঞতা নিতে পারে। তিনি জানান, ব্রাজিলের মানুষেরা বছরে মাথাপিছু ১০০ কেজি গরুর মাংস খায়। বাংলাদেশে এ হার অনেক কম। ব্রাজিলে একটি গরুর থেকে দিনে গড়ে ৪৫ কেজি দুধ পাওয়া যায়; বাংলাদেশে পাওয়া যায় সাত-আট কেজির মতো।

পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস বলেন, ‘সুতরাং শুধু মাংস রপ্তানি নয়, প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমেও বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করতে পারে ব্রাজিল। তবে এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, ব্রাজিলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কর্মসূচি রয়েছে। এ জন্য ব্রাজিল সরকার প্রচুর পরিমাণে ওষুধ কিনে থাকে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো এ সুযোগ নিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও সনদ বা সার্টিফিকেশনের জটিলতা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বারের সহসভাপতি মো. সাইফুল আলম জানান, চলতি বছরের ১৫ থেকে ১৮ জুন ব্রাজিলের সাও পাওলোতে প্রথমবারের মতো ‘মেড ইন বাংলাদেশ প্রদর্শনী ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রদর্শনী দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য নতুন বাজারে প্রবেশ ও তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

সাইফুল আলম আরও বলেন, ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রতিযোগিতামূলক নয়; বরং সহায়তামূলক। ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি বছরে মাত্র ১০০ কোটি মার্কিন ডলার।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ থেকে ১০০-১৫০ জন ব্যবসায়ী প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের জন্য ব্রাজিলে ব্যবসায়িক সংযোগ গড়ে তোলার পাশাপাশি সয়াবিন, চিনি এবং শিল্পের যন্ত্রপাতির মতো উচ্চমানের পণ্য খোঁজার সুযোগ সৃষ্টি হবে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিবিসিসিআই মহাসচিব মো. জয়নাল আবেদীন।

 

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ