মঙ্গলবার, ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,৬ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
Mujib

/

এর সর্বশেষ সংবাদ

ভাষা আন্দোলন ও ‘ভাষা-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ গঠনের ভিত

সম্পাদকীয়: ‘মোদের গর্ব মোদের আশা, আমরি বাংলা ভাষা।’ এই মাতৃভাষাকে আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালির রক্তে রাঙানোর দিন আজ। ২১শে ফেব্রুয়ারি, ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বহুভাষায় শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা’- আমরা মনে করি, এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত হয়েছে। এতে করে সকল ভাষার প্রতি যাথার্থ্য সম্মান প্রদর্শনের চিত্রটি ফুটে উঠেছে।

বাঙালি জাতির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষা-ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত। ১৯৫২ সালের এই দিনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা’র মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ আরো অনেকে। আমরা বাংলাসহ বিশ্বের সকল ভাষা-শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। সেই সঙ্গে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি- বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল ভাষাসৈনিকদের, যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।

১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন। ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকায় এ খবর পৌঁছামাত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এক সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করে খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ঘোষণা দেয়, পূর্ব বাংলার জনগণকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু নাজিমুদ্দিনের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের জন্য নির্ধারিত ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী, ঐদিন সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে এবং সেখানে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে কতগুলো তাজা প্রাণ নিমেষেই ঝরে পড়ে, অনেকে আহত হন, অনেকে গ্রেফতার হন। ২২ ফেব্রুয়ারি হরতাল পালিত হয়।

১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়, প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারি-কে শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে এবং শহিদ মিনার তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করে। দুর্ভাগ্য, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির ফলে সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো আর বাস্তবে রূপদান সম্ভব হয়নি । স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা সকল দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বাংলায় জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে উচ্চ আদালতের রায়ও বাংলায় লেখা শুরু হয়েছে, আদালতের এই উদ্যোগজে আমরা সাধুবাদ জানাই।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published.

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ