নিজস্ব প্রতিবেদক :বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে হওয়া ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক ইন ট্রানজিট অ্যান্ড প্রোটোকল’ চুক্তির ফলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজতর হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার (২২ মার্চ) ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অবস্থিত লা মেরিডিয়ান হোটলে স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ১২টায় এ ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি স্বাক্ষর শেষে এক বক্তব্যে এ কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং ভুটানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন দেশটির শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কর্মা দর্জি।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, যুগান্তকারী এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজতর হওয়ার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে। স্বাক্ষরিত চুক্তি দেশের জন্য কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক সংযোগ এবং কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ আন্তঃযোগাযোগ বাড়ানো ও আঞ্চলিক ভ্যালু চেইন সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে চায়। এর অংশ হিসেবে চারদিকে স্থলভাগ বেষ্টিত ভুটানকে বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বিমান, রেল, স্থল, নৌবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে।
এ চুক্তির ফলে উভয় দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক যোগাযোগে ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভুটানের পণ্য রফতনি ও আমদানি করলে বাংলাদেশ বিভিন্ন ফি এবং চার্জ লাভ করবে। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটবে। ট্রানজিট এগ্রিমেন্ট বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলো অধিকতর কর্মক্ষম হবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে।
এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি বন্দরগুলোর সার্বিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বাড়ছে এবং দ্বিপাক্ষিক এই সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত ও শক্তিশালী করতে উভয় রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর ভুটানের মন্ত্রী, সচিব ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী কৃষিখাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বিশেষ করে মাশরুমসহ কৃষিপণ্যের বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত এক দশকে অর্থ-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য-শিক্ষা এবং যোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ সব খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জিত হয়েছে জানিয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, আর উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এসময় বিগত বছরগুলোর মতো সব আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখা ছাড়াও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ট্রিলিয়ন ডলারের যাত্রায় ভুটানকে উন্নয়ন অংশীদার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ভুটানের শিল্প বাণিজ্য কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব দাশ তাশি ওমাং এবং শক্তি ও নবায়নযোগ্য সম্পদ বিষয়ক সচিব দাশ কর্মা শেরিং, ভুটান চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং ভুটানের বিভিন্ন অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, গেল ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির অনুমোদন দেয়া হয়।