মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

অর্থের অভাবে শিক্ষার আলো নিভতে না দেওয়া

মাভাবিপ্রবিতে পাঁচ শিক্ষার্থীর মানবিক উদ্যোগ

সমাপ্তী খান, মাভাবিপ্রবি: ‎টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান এক মেধাবী ছাত্রী। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তাকে মায়ের কানের দুল বিক্রি করে প্রাথমিক ভর্তি সম্পন্ন করতে হয়।

চূড়ান্ত ভর্তি ফি জোগাড় করতে না পেরে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘MBSTU Insiders’ গ্রুপে সহায়তার জন্য আবেদন জানান।

‎এই আবেদন দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী—মেহেদী হাসান রাকিব, সাকিব আল হাসান রাব্বি, তানবীর ইসলাম তামিম, তুষার আহমেদ এবং মো. হৃদয় হোসাইন—তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাদের মনে হয়, হয়তো আরও অনেক শিক্ষার্থী একই সমস্যায় ভুগছেন। তাই ২৬ জুন তারা ‘MBSTU Admission Helpline’ নামে একটি পোস্ট দিয়ে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান। এ ছাড়া মাভাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির মাধ্যমেও আহ্বান জানানো হয়।

‎অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সাহায্য চেয়েছিলেন। পরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে ইএসআরএম, বিএমবি, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, এফটিএনএস, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন—এই ৬ বিভাগে ৬ জন এবং হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ২ জনসহ মোট ৮ জন নবীন শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। এই মহৎ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শুভাকাঙ্ক্ষী অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন।

‎টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাকিব বলেন, “আমি যখন শুনতে পেলাম যে টাকার অভাবে কিছু মানুষের জীবনে শিক্ষার আলো নিভে যাচ্ছে, তখন মনটা গভীরভাবে নাড়া খেয়েছিল। সেই মুহূর্তে আমরা কয়েকজন মিলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেই—যেভাবেই হোক, যত পরিশ্রমই হোক না কেন, আমরা এই শিক্ষার্থীদের ভর্তির দায়িত্ব নেব এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ম্যানেজ করব। আজ আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পেরেছি। এটি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, এটি মানবতার জয়, একতার প্রতীক এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস।”

‎পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান রাব্বি বলেন, “ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারে। তাদের স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকতে পারার অনুভূতি শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। চেষ্টা করেছি নিজের সবটুকু দিয়ে। আল্লাহ সহায় হয়েছেন। ইনশাআল্লাহ ভালো কাজের সাথে সবসময় থাকব।”

‎পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি অর্থের অভাবে যেন কোনো মেধা ঝরে না পড়ে। যারা ভর্তি হয়েছে, সবাই আমাদের ছোট ভাইবোন। যে কোনো সমস্যায় আমরা সর্বদা তাদের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ।”

‎আইসিটি বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী তানবীর ইসলাম তামিম বলেন, “২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে ৮ জন নবীন শিক্ষার্থীকে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি যেন কোনো শিক্ষার্থী আর্থিক, সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার না হয়। শিক্ষা সবার অধিকার, আর উচ্চশিক্ষার পথে কোনো প্রকার বৈষম্য বা হয়রানি বরদাশত করা হবে না।”

‎টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হৃদয় হোসাইন বলেন, “মানুষ মানুষের জন্য—এই কথাটিই আমরা কাজে প্রমাণ করেছি। ভবিষ্যতেও যেন কোনো শিক্ষার্থী অর্থের অভাবে স্বপ্ন হারাতে না হয়, সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাব।”

‎শিক্ষার্থীদের মতে, এই সহায়তা কেবল অর্থ প্রদানের বিষয় নয়—এটি মানবতার জয়, একতার প্রতীক এবং ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার এক মহৎ প্রয়াস।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ