বুধবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

মেহেরপুরে কর্মকর্তাদের অবহেলায় ১৫০ বিঘা জমির ধান গাছ নষ্ট

মেহেরপুর প্রতিনিধি : মেহেরপুর গাংনীর চিৎলা ভিত্তিক পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালকের অদক্ষতায় অতিমাত্রায় আগাছানাশক প্রয়োগে পুড়ে গেছে প্রায় দেড়শ বিঘা জমির ধান। এতে সরকার হারাচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। একই সাথে হুমকির মুখে ধান বীজ উৎপাদন। তবে কেন অতিমাত্রায় আগাছানাশক প্রয়োগ করা হয়েছে তার জবাব নেই খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের কাছে।

আগাছানাশক স্প্রে করা শ্রমিকরা বলছেন, জেডি স্যারের ব্যক্তিগত লোক বিষ সরবরাহ করেন আর আমরা শুধু ফসলে স্প্রে করি।

সোমবার সকালে সরেজমিনে চিৎলা ভিত্তিক পাট বীজ খামারে গিয়ে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ এখন সবুজের পরিবর্তে হলুদ হয়ে গেছে। পচে গেছে ধানের গোড়া। পুড়ে গেছে ধানের সব পাতা ও কাণ্ড।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে ১২০ একর জমিতে ব্রী ২১ ও ব্রী ৭২ উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয় প্রায় একমাস আগে। ধান রোপণের পর জমিতে আগাছা বৃদ্ধি পায়। খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিন ধানের জমিতে কীটনাশক ও আগাছানাশক প্রয়োগ করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। নাজিম উদ্দিন নিজেই কীটনাশক বালতিতে ভরে শ্রমিকদের কাছে দেন। চলতি মাসের ২ তারিখে শ্রমিকরা ধানখেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কীটনাশক প্রয়োগের কয়েক দিনের মধ্যেই ধানের চারা গাছগুলো মরতে শুরু করে। তবে কী ধরনের কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার করা হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি কর্মরত শ্রমিকদের।

জানা গেছে, নিম্নমানের কীটনাশক ও সার, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত শ্রমিক নাজিম উদ্দিনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার একটি দোকান থেকে নিয়ে আসেন। নিম্নমানের কোম্পানির সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এই খামারে দিন দিন ফলন কমছে।

এই ব্যাপারে যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৩টি ব্লকের ধানগাছ পুড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। জমির আইলে এখনো যাওয়া হয়নি। উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তারপর আমরা কারণ নির্ধারণ করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, আমার ডিপার্টমেন্ট সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

খামারে কর্মরত শ্রমিক সর্দার আব্দুল মান্নান বলেন, ধানের জমিতে অনেক আগাছা জন্মায়। তাই নাজিম উদ্দিন তাদেরকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেন। সেই কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জমির ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে কতটুকু কীটনাশক দিতে হবে নাজিম উদ্দীন আমাদের বলে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে।

মাস্টার রোলের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের যুগ্ম পরিচালক স্যারের লোক নাজিম উদ্দীন কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে দেন। আমরা তার নির্দেশমত জমিতে স্প্রে করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, জমির ধান মরে যাওয়া শুরু হলে ওই কীটনাশকের বোতলের আলামত নষ্ট করার জন্য তড়িঘড়ি করে নাজিম উদ্দিন বোতলগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। তাদের মতে, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিনের দেওয়া নিম্নমানের কীটনাশকের জন্য মাঠের পর মাঠের ধান পুড়ে গেছে।

নাজিম উদ্দিনের অনুমতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে পারেন না শ্রমিক ও খামারের উপসহকারী কর্মকর্তারা (ডিএডি)। নাজিমুদ্দিন এই খামারের যুগ্ম পরিচালকের নিকটাত্নীয় পরিচয় নিয়ে কাজ করেন। এখন ফার্মের সকল কার্যক্রম চলছে তারই নির্দেশে।

শ্রমিকরা বলেন, বিনা কারণে শ্রমিক ছাঁটাই করতে শুরু করেছেন সহকারী পরিচালক স্যার। এ নিয়ে শ্রমিকরা মানববন্ধন করেছেন। শ্রমিকদের হয়রানি করতে জেডি স্যারের ভাড়াটে লোক নাজিমুদ্দিন ও সাহাদতকে দিয়ে আগাছানাশক মিশিয়ে দেয়। কীটনাশক বা আগাছানাশকের বোতল বা মোড়ক আমাদের দেখানো হয় না। কি ধরনের আগাছানাশক মিশিয়েছেন তা জেডি স্যার, নাজিমুদ্দিন ও সাহাদত ছাড়া আর কেউ জানে না।

এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিক দেখে যুগ্ম পরিচালকের একান্ত সেই নাজিম উদ্দিন লুকিয়ে পড়েন। তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এদিকে কীটনাশকের বোতল সংগ্রহ করে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের কাছে নিলে তিনি বলেন, এগুলো আগাছানাশক। এসব নিম্নমানের আগাছানাশক বা কীটনাশক জমিতে বেশি ব্যবহার করলে ধান গাছের গোড়ায় ধীরে ধীরে পচন ধরে ও খেত মরে যায়।

এদিকে ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেহেরপুর বিএডিসির উপ-পরিচালক শামীম হায়দার ও কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ এনডিসির সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ