বৃহস্পতিবার, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রায়গঞ্জে বেড়েই চলেছে ‘অজ্ঞাত চর্মরোগ’

বিশেষ প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে অন্যান্য রোগের তুলনায় চর্মরোগ বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে এ রোগে।

তবে পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। কারো কারো ক্ষেত্রে দামি এন্টিবায়োটিক না খেলে কোন মতই পিছু ছাড়ে না এই চর্মরোগ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এইসব চর্ম রোগের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নেই, চিকিৎসকরা শুধু ব্যবস্থাপত্র করে দিয়ে রোগী পাঠিয়ে দেন।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা সাম্প্রতিক বন্যার দূষিত পানি, পরিবেশ দূষণ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, খাদ্যাভ্যাস ও ত্বকের যত্নের অভাবকেই দায়ী করছেন। তবে শিশু ও নারীদের আক্রান্তের সংখ্যায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। এ থেকে উদ্ধারে পারিবারিক সচেতনতাই প্রথম প্রতিরোধ বলে মনে করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে চর্ম রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেশি। সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে দেখা গেছে, কেউ এসেছেন পুরো শরীরে ঘামাচির মতো ছোট ছোট ফুসকুড়ি সাথে তীব্র চুলকানি। কেউ এসেছেন খোসপাঁচড়া নিয়ে, আবার কেউ এসেছেন স্কেবিস নিয়ে। কেউ কেউ এসেছেন চুলকানি নিয়ে।

এ ছাড়া চর্ম রোগের নানা লক্ষণ নিয়ে এসেছেন রোগীরা। এ চিত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালেও।

সরেজমিনে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে এ রোগে আক্রান্ত শত শত রোগীর খোঁজ পাওয়া যায়। অনেক দাম দিয়ে ঔষধ সেবন করার পরেও তেমন কাজে আসে না দাবি তাদের। চান্দাইকোনা ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষিকোলা গ্রামে গিয়ে কথা হয় গৃহবধূ রিশা খাতুনের সঙ্গে। প্রায় ৬ মাস আগে বিরল এক চর্মরোগে আক্রান্ত হন তিনি। হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। মাসের পর মাস নানা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েও প্রতিকার পাননি। তার শিশুসন্তানসহ পরিবারের দু’ জন একই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছি। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। যত দিন ওষুধ খাই, ততদিন ভালো থাকি। তারপর রোগটা আবার নতুন করে শুরু হয় এবং ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত স্থানে চুলকায়, জ্বালা করে, লাল হয়ে ফুলে কষ বের হয়, অস্বস্তি লাগে।’

দুই হাতের আঙুলে চর্মরোগে আক্রান্ত উপজেলার মিরা খাতুন জানান, ‘আক্রান্ত স্থানে হঠাৎ ঘামাচির মতো বের হয়। তারপর চুলকানি শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সমস্যা। চর্মরোগ প্রতিরোধের ওষুধ সেবন করলে সাময়িক সুস্থ হন তারা।’

এ ছাড়াও আটঘরিয়া এলাকার সবিতা রানী( ৪২), লেবু মোল্লা( ২৫), শিশু আবু তাকরিম , পিংকি রানী (৩৭), অবিরন (৪০), তেলিজানা গ্রামের আমজাদ হোসেনসহ উপজেলার শত শত নারী-পুরুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আমিমুল ইহসান তৌহিদ বলেন, আমাদের চারপাশে নানাভাবে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এর ফলে মানবদেহে বাসা বাঁধছে নানা রোগ। এসব রোগের মধ্যে চর্মরোগ বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ছত্রাক, পরজীবীসহ নানা জীবাণু দ্বারা চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত না করার ফলে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুসহ নারীরা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, , বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *