মঙ্গলবার, ১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

সুপার এইটে টাইগার ওপেনারদের ‘অগ্নিপরীক্ষা’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ওপেনাররা ভালো খেলছেন না অনেকদিন ধরেই। ওপেনিং সংকটে ভুগেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচেও ওপেনারদের ব্যাট কথা বলেনি। শেষ ম্যাচে তানজিদ হাসান তামিম আর সৌম্য সরকার রান করায় মনে হয়েছিল ওপেনারদের রানখরা বুঝি কেটে গেছে। কিন্তু না; রানখরা কাটলো না? বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবার ওপেনিং জুটির সেই হতচ্ছিরি অবস্থা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে শেষ গা গরমের ম্যাচে রান পাওয়া সৌম্য বিশ্বকাপের মাঠে প্রথম নেমে ফিরে গেছেন ০ রানে। বাঁহাতি এই ব্যাটারের রান না করা এবং খুব বাজেভাবে আউট হওয়ার কারণে একাদশে জায়গাও হারিয়েছেন তিনি। তারপর সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে তানজিদ তামিম আর লিটন দাস, পরে তানজিদ তামিম ও অধিনায়ক শান্তকে দিয়ে ওপেনিং করানো হয়েছে। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি একটুও। ওপেনিং জুটিটা সেই ভাঙ্গাচোরাই থেকে গেছে।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি একবারের জন্য শক্ত ভিত গড়ে দেওয়া বহুদূরে, ১০ রানও তুলে দিতে পারেনি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সৌম্য আর তানজিদ তামিম মিলে ১ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লিটন ও তানজিম তামিম জুটি ৯ রান, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে তানজিদ তামিম আর শান্তর গড়া উদ্বোধনী জুটি ভেঙ্গেছে যথাক্রমে ৩ ও ০ রানে।

মোদ্দা কথা, প্রথমে তানজিদ তামিম-সৌম্য, তারপর তানজিদ তামিম-লিটন আর সব শেষে তানজিদ তামিম-শান্ত; গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচে ৩ বার উদ্বোধনী জুটি রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু চোখে পড়েনি কোনো উন্নতি। অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি একটুও। কি করে হবে? সবাই যে টানছেন ব্যর্থতার ঘানি!

সৌম্য প্রথম ম্যাচে ০ রানে আউট হয়ে বাদ পড়েছেন। আর তানজিদ তামিম (৩, ৯, ৩৫, ০) ৪ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৭ রান,লিটন (৩৬, ৯, ১, ১০) ৫৬ রান, অধিনায়ক শান্ত (৭, ১৪, ১, ৪) করেছেন কেবল ২৬ রান। অর্থাৎ চার টপঅর্ডার মিলে রান করেছেন মোটে ১২৯ রান।

তিন ব্যাটারের তিন রকম অবস্থা। বাঁহাতি তরুণ তানজিদ তামিম শুরু থেকেই ছটফট করছেন। উইকেটের চরিত্র, গতি-প্রকৃতি না বুঝে এবং প্রতিপক্ষের বোলারদের লাইন-লেন্থ না ঠাউরে নিজের মতো করে খেলার চেষ্টায় আছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুল খেলতে গিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন।

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বেশির ভাগ উইকেটের গতি ও বাউন্সে স্থিতি নেই। কখনো বল পড়ে জোরে আসে, আবার কোনো সময় থেমে আসে, কোনটা একটু নীচে থাকছে, কিছু বল টার্নও করছে। আবার হঠাৎ লাফিয়েও উঠছে কোনো কোনো ডেলিভারি।

যুক্তরাষ্ট্রর নিউইয়র্কের নাসাউ আর সেন্ট ভিনসেন্টের আরনোস ভেলির পিচ পুরোই ‘বিদঘুটে’। মোটেই আদর্শ টি-টোয়েন্টি উইকেট নয়। এমনকি স্পোর্টিংও নয়। হাত খুলে খেলা খুব কঠিন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত না দেখে এবং শট পিচ ও হাফ ভলি, ফুলটচ এবং ওভার পিচ তথা আলগা ডেলিভারির অপেক্ষায় থেকে সেগুলো কাজে লাগানোই সর্বোত্তম কৌশল।

এসব পিচে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড আর পাকিস্তানের ব্যাটাররাও ইচ্ছেমতো হাত খুলে খেলতে পারেননি। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, বাবর আজমরা স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেনি। রানও পাননি। সেখানে বাংলাদেশের তরুণ তানজিদ তামিম প্রায় ম্যাচে শুরু থেকে তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন।

উইকেটে বল আসছে দুই রকম গতিতে। কখনো জোরে, কখনো ধীরে। কোনটা স্বঅবাবিক উচ্চতায় থাকছে আবার কিছু ডেলিভারি নিচুতে থাকছে। এরকম উইকেটে কাট, পুল, ফ্লিক, সুইপ, রিভার্স সুইপ ও স্কুপ খেলা মানেই ঝুঁকি। তানজিদ তামিম সেই ঝুঁকি নিতে গিয়ে নিজের উইকেট বিসর্জন দিয়ে আসছেন।

অন্যদিকে লিটন ভুগছেন শটস নির্বাচনে। তার মধ্যে তুলে মারার প্রবণতা বেশি। সেগুলো সীমানার ওপারে গিয়ে আছড়ে পড়লে ঠিক ছিল। কিন্তু লিটনের স্লগ সুইপ, তুলে মারা অফ ও অন ড্রাইভ গুলো সীমানার ৫-৭ গজ আগে ফিল্ডারদের হাতে চলে যাচ্ছে।

অধিনায়ক শান্ত ভুগছেন আত্ববিশ্বাস ও আস্থার অভাবে। নিজের করনীয় কী? মেরে খেলবেন নাকি ধীরে সুস্থ্যে একদিক আগলে রাখবেন, তা ঠাউরে উঠতে না পারার চওড়া মাশুল গুনছেন টাইগার ক্যাপ্টেন। তার স্ট্রাইকরেট সমস্যা আছে বরাবরই। সে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করে অযথা ব্যাট চালিয়ে খেলতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনছেন শান্ত। এতে করে ‘ইম্প্রোভাইজ করে খেলা এবং ঝুঁকিপূর্ণ শটস খেলার চেষ্টাও থাকছে বেশি। সেগুলোই তার বড় ইনিংস খেলার পথে বাঁধা হয়ে দেখা দিচ্ছে।

ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, যেহেতু এখন পর্যন্ত নেদাল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের উইকেট ছাড়া বাকি ৩ ম্যাচের উইকেটে সমস্যা ছিল, সেখানে শান্ত ব্যাট চালিয়ে ও দ্রুত রান তোলার চেষ্টা না করে পাকিস্তান ক্যাপ্টেন বাবর আজমের মতো একদিক আগলে রাখার চেষ্টা করলে হয়তো রান পেতেন। তাতে করে লম্বা ইনিংস খেলার সম্ভাবনা ছিল।

যেহেতু তানজিদ তামিম ও লিটনের তুলনায় শান্তর ধরে খেলা এবং একদিক আগলে রাখার সামর্থ্য বেশি, তাই বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন ১০০+ বা ১১০ স্ট্রাইকরেটে একটি চল্লিশোর্ধ ইনিংস খেলতে পারলে কাজের কাজ হতো। তাহলে পরের দিকে সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয় আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্বাচ্ছন্দে খেলা সহজ হবে। তাতে করে ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশাও কাটতে পারে।

সেটি না করে তানজিদ তামিম, লিটন ও শান্ত গ্রুপ পর্বের মতো লক্ষ্য ও পরিকল্পনাহীন ব্যাটিং করলে সুপার এইটে বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হতে পারে। ভুলে গেলে চলবে না যে- শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বোলিং শক্তির বিপক্ষে তারা রান পাননি, প্রথম উইকেটে ১০ রানও তুলে দিতে পারেননি। সুপার এইটে লিটন, তানজিদ তামিম আর শান্তকে দিতে অগ্নিপরীক্ষা।

মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউডের গড়া অস্ট্রেলিয়ার ফাস্টবোলিং, অর্শদীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ সিরাজের মতো ইনফর্ম বোলারে সাজানো ভারতীয় ফাস্টবোলিং এবং ফজল হক ফারুকি, নাভিন-উল হক এবং রশিদ খানের গড়া আফগানিস্তানের বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিংয়ের মোকাবিলা করতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। এই বিশ্বমানের বোলারদের নিয়ে গড়া ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে কী করবে টাইগার ওপেনিং জুটি?

এখন দেখার বিষয় হলো, আগামীকাল ২১ জুন অ্যান্টিগায় অসিদের বিপক্ষে ওপেনিং জুটি কাদের দিয়ে সাজানো হয়? খেলার মাঠেই বা কেমন করে সেই জুটি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *