মঙ্গলবার, ১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য

সুর পাল্টালেন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ স্টারমার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশি ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে নিজ দল লেবার পার্টিতেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছেন নেতা কিয়ার স্টারমার। তার কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লেবার এমপি’রা। পদত্যাগও করেছেন দলের এক কাউন্সিলর। বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকেও তার তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।

এরপরই সুর পাল্টেছেন স্টারমার। বলেছেন, কাউকে আক্রমণ করে কথা বলা বা মর্মাহত করার কোনও অভিপ্রায় তার ছিল না।

বিবিসি রেডিও ৫ লাইভ অনুষ্ঠানে ফোনকলে একজনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় স্টারমার তার মন্তব্যের ওই ব্যাখ্যা দেন বলে জানিয়েছে ‘দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট’ পত্রিকা। কিয়ার স্টারমার এও স্বীকার করেছেন যে, তিনি একজন ‘আনাড়ির’ মতোই কথা বলেছিলেন।

এ সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ‘ডেইলি সান’ পত্রিকা আয়োজিত এক নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠানে অবৈধ অভিবাসী প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বাংলাদেশের উদাহরণ দিয়েছিলেন স্টারমার।

তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তার সরকার অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে, সে দেশেই তাদেরকে ফেরত পাঠাবে। আর এ সময়ই তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ দেন।

একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেনি। অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। সুতরাং লেবার সরকারের প্রথম কয়েক দিনে আমি কি করব তা বলছি, আমি তাদেরকে (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেব।

তার বক্তব্যের এই ভিডিও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগের মাঝে লেবার পার্টি বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিল। তাদের দাবি ছিল,স্টারমারের কথার অপব্যাখ্যা হচ্ছে। স্টারমার যে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি সম্প্রদায়কে গর্বের সঙ্গেই সমর্থন দিয়েছেন সেকথাও জোরের সঙ্গেই বলেছিল লেবার পার্টি।

এবার স্টারমারও এই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেছেন, “বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে বিরাট অবদান রেখেছে। লেবার পার্টি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে দৃঢ় একটি বন্ধন আছে। আমার সঙ্গেও বাংলাদেশ কমিউনিটির বন্ধন খুবই শক্ত। বিশেষ করে আমার নির্বাচনী এলাকায়।”

এ বন্ধন এতটাই প্রগাঢ় যে, লেবার এমপি হিসাবে প্রথমেই বাংলাদেশ সফর করেছেন জানিয়ে স্টারমার বলেন, ঢাকা দিয়ে শুরু করে পরে সিলেট এবং মৌলভিবাজারেও গেছেন তিনি।

স্টারমার কথাগুলো বলার সময় বিবিসি রেডিও ৫ লাইভের উপস্থাপক নিকি ক্যাম্পবেল বলে ওঠেন, তাহলে আপনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ‘আনাড়িপনা’ ছিল বলে আপনি মেনে নিচ্ছেন কিনা।

জবাবে, স্টারমার বলেন, “সেটি বলাই ভাল হবে। আমি কাউকে আক্রমণ করে কথা বলতে চাইনি। আমি কেবল আশ্রয়প্রার্থনা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম।”

যুক্তরাজ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে দিয়ে স্টারমারের বাংলাদেশ নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের জেরে দুইদিন আগেই পদত্যাগ করেন লেবার দলের ডেপুটি লিডার বাংলাদেশি বংশদ্ভূত কাউন্সিলর সাবিনা আখতার।

তার অভিযোগ ছিল, নির্বাচনের আগমুহূর্তে টিভি বিতর্কে স্টারমার বাংলদেশ সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তা ‘অযাচিত’।

পদত্যাগ পত্রে তিনি লেখেন, “আমি গর্ববোধ করতাম লেবার পার্টিকে নিয়ে, কিন্তু আমাদের দলীয় প্রধানের বক্তব্য বাংলাদেশি কমিউনিটি যেভাবে অপমানিত হয়েছে তা আমাকে লজ্জিত করেছে। আমি সারাজীবন লেবার পার্টির জন্য সোচ্চার ছিলাম, কিন্তু আমাদের কমিউনিটিকে ছোট করে দেওয়া লেবার পার্টির প্রধানের বক্তব্যে আমি মর্মাহত হয়েছি।”

ওদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রুশনারা আলিও লেবার নেতার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, হাউজ অব কমন্সে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি হয়ে তিনি গর্বিত ছিলেন। কিন্তু স্টামারের মন্তব্যে তিনিও ব্যথিত হয়েছেন।

আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত সাবেক লেবার এমপি আফসানা বেগমও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এক্সে এক পোস্টে লিখেছিলেন, রাজনীতিবিদরা অভিবাসীদের ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে পারেন না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *