শনিবার, ৪ঠা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৮ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হিলিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

কৌশিক চৌধুরী, হিলি : দিগন্ত জোড়া মাঠে দখিনা বাতাসে ক্ষেতে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই উৎসব। খাদ্যশস্যর ভান্ডার হিসেবে পরিচিত দেশের উত্তরের জেলা দিনাজপুর। হিলিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা। এদিকে বিপাকে পড়েছে বর্গাচাষিরা ।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সোনালি রঙের পাকা ধান। দিনরাত নিরলস ভাবে শ্রম দিয় এসব ধান কাটছে শ্রমিকরা আর বিভিন্ন পরিচর্যা ও সিদ্ধ শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকেরা। বাজারে চাহিদা মোতাবেক দাম না থাকায় বিপাকে পড়েছে বর্গাচাষিরা।

কৃষক মিজানুর রহমানেরা সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৩৩ শতকে (এক বিঘা) কাটা-মাড়াই মিলে শ্রমিকরা নিচ্ছেন বিঘাপ্রতি ৪ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার ৫’শ টাকা। বাজারে ধানের চাহিদা ও ভালো দাম না থাকায় উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়েই শঙ্কিত চাষীরা। এদিকে হাকিমপুর উপজেলার সরকারী খাদ্য গোডাউন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু হওয়ায় ধানের দাম বেশি হবে বলে আশা কৃষকদের।

হাকিমপুর উপজেলার মোল্লা বাজার এলাকার কৃষক শুভ হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবার আমি ছয় বিঘা জমিতে চিকন জাতের ইরি ধান চাষ করেছি। ইতিমধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। বিঘা প্রতি ২২-২৩ মণ ধান ঘরে তুলতে পারবো। তবে বাজারে ধানের চাহিদা কিছুটা কম থাকায় ধানের দামও কমে গেছে। প্রথম এর দিকে ১২’শ টাকা মন দাম থাকলেও বর্তমানে ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১১’শ টাকা মন দাম বিক্রি হচ্ছে।

আলিহাট ইউনিয়নের বর্গা চাষী আমজাদ হোসেন বলেন, এবার অন্যর ৬-৭ বিঘা জমি বর্গা চাষ করেছি। প্রতি বিঘাতে জমির মালিককে অগ্রিম ১০ থেকে ১০ হাজার ৫শ টাকা দিতে হয়। এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে এতে আমি খুব খুশি। কিন্তু বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে তাই ইরি ধান চাষে খরচা বেশি হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় ধানের দাম নাই। বর্তমান যে ধানের দাম তাতে হয় তো কাটা মাড়াই করে সমান সমান হবে মাঝখানে শুধু ইরির কড়টা পাওয়া যাবে।

তিনি আরো বলেন, এক বিঘা জমি তৈরি থেকে ধান কাটা মাড়াই পর্যন্ত সব মিলে প্রায় ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। আবার জমি মালিক দশ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে ধান পাওয়া যাচ্ছে ২২-২৩ মন। বাজারে ধানের দাম না থাকলে আমরা বর্গা চাষীরা জমির মালিককে কি দিবো আমরা কি পাবো বাজারের যায়জিনিসের দামটা কিছুটা কমলে ভালো হতো।

ধান কাটা মাড়াই শ্রমিক হান্নান বলেন, আমরা ১৬ জনের একটি দল দেশের বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ধান কাটা-মাড়াই কাজ করি। এবার হিলিকে আসছি এখানে প্রতি বিঘা (৩৩ শতক) ধান কাটা মাড়াইসহ ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫’শ টাকা নিচ্ছি। আমরা দিনে প্রায় ৭ থেকে ৮ বিঘা জমির ধান কাটা-মাড়াই করে থাকি। এখন আবহাওয়া ভালো আছে তাই এ দামে ধান কাটছি। ঝড় বাতাস ও বৃষ্টি হলে ধান কাটার দাম বৃদ্ধি পাবে।

হাকিমপুর উপজেলার কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭৬১৫ হেক্টর জমি। সেখানে আবাদ হয়েছে ৭৬১৬ হেক্টর জমিতে। এবার হাকিমপুর উপজেলায় বোরো ধানের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার জন কৃষককে। এপর্যন্ত উপজেলায় প্রায় ৩৫-৪০% ধান কর্তন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন চিকন জাতের ধান বিঘাপ্রতি ২৪-২৫ মণ হচ্ছে। এছাড়াও উন্নত জাতের বীজ থেকে প্রতি শতকে ১ মণ হারে কৃষকরা ধান পাবেন বলে আশা করছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে কৃষকরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ