সোমবার, ১৬ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৩০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

কুড়িগ্রামে জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুল

শাহদাৎ হোসেন লাল, স্টাফ রিপোর্টার: সবুজের মাঝখানে সাদা,বেগুনি ও হালকা গোলাপী রঙে বিভিন্ন খাল, ডোবা ও জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুটে আছে অযত্নে বেড়ে ওঠা কচুরিপানা ফুল। দেখলে মনে হবে যেন ফুলেল চাঁদরে ঢেকে রাখা হয়েছে জলাশয়গুলো। প্রস্ফুটিত এ সব ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের সিঙ্গিমারী এলাকায় রাজারহাট-সেলিম নগর সড়কের পাশে মুক্ত জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুলগুলো। সড়কের পাশে এই অসাধারণ কচুরিপানার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য নজর কাড়ছে সবার। দু-চোখ যে দিকে যায়,শুধুই মনোমুগ্ধকর কচুরিপানার ফুল আর ফুল। দেখে মানুষের হৃদয় জুড়িয়ে যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল-বিল ও জলাশয়ে কচুরিপানা ফুলে এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেছে।

কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান এক ধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pontederia। দক্ষিণ আমেরিকায় এর আদি নিবাস। চকচকে সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিভাগে এরা জন্মায় ও বংশবিস্তার করে। এর কাণ্ড থেকে দীর্ঘ,তন্ত্রময় বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়,যার রং বেগুনি কালো। একটি কাণ্ড থেকে ৬টি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়ে থাকে। এই ফুলের পাপড়ি নরম হয়। এই উদ্ভিদ দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এদের সাতটি প্রজাতি রয়েছে। সৌন্দর্য বিলানোর পাশাপাশি এই উদ্ভিদটি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে। এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটিকে খাদ্য হিসেবেও গ্রহণ করে। এটি থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আসছে। পানির ওপর কচুরিপানার স্তূপ করে এর ওপর সবজি চাষ করা হয়। এ ছাড়াও এটি গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সব মিলে এই কচুরিপানার বহুজাতিক গুণ রয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাল, বিল, ডোবা, নিচু জমি, পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ে ফুটে আছে কচুরিপানা ফুল। ফুটন্ত এসব ফুলের সৌন্দর্যে আসা যাওয়ার পথে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমী মানুষসহ পথচারীরা। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুদের খেলনা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ফুল। সৌন্দর্যপ্রেমীরা এসব ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন আঙ্গিকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে আনন্দ পান। আবার কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে নিজেকেও ক্যামেরাবন্দি করছেন পরম আনন্দে। কচুরিপানা ফুলের মুগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় স্থানীয়দের।

সিঙ্গীমারী এলাকার বাসিন্দা বাদশা ও অশিম বলেন, এলাকার প্রায় জলাশয়েই কচুরিপানা ফুল ফুটে আছে। আমরা জলাশয় পরিষ্কার করে এসব কচুরিপানা তুলে রোদে শুকিয়ে রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। এ ছাড়াও কচুরিপানা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করি।

উপজেলার সেলিম নগর এলাকার শিক্ষার্থী সুমি আক্তার ও বিলাশ মিয়া এলাকায় এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কচুরিপানার ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে দুইজনেই তা মোবাইল ধারণ করেন।

ফুলপ্রেমী সহকারী শিক্ষক সফিকুল ইসলাম জানান, মুক্ত জলাশয়ে এক সঙ্গে ফুল ফুটে থাকার যে সৌন্দর্য তা অন্য কোনো ফুল থেকে পাওয়া যায় না। এই ফুলের পাপড়ি নকশাখচিত হওয়ায় এর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয় মানুষ। কচুরিপানা ফুল গ্রামীন ঐতিহ্যের একটি ফুল।

রাজারহাট উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার হৈমন্তী রানী বলেন, কচুরিপানা এক ধরনের বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ। কচুরিপানার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত করা যায়,যা কৃষকের কাজে আসে। বর্তমানে কোথাও কোথাও এই উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি জৈব সার বাণিজ্যিকভাবেও বেচাকেনা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান সবজি চাষেও কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়।

এ ছাড়াও এই উদ্ভিদটি গো খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের ফুলও দেখতে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। তবে কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। এ জন্য নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তা না হলে দ্রুত বংশবিস্তার করে ফসলের ফলনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *