বৃহস্পতিবার, ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Mujib

/

এর সর্বশেষ সংবাদ

বাঙালির মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা-ই ছিলো বঙ্গবন্ধুর সাধনা

আজ থেকে একশ তিন বছর পূর্বে গোপালগঞ্জের নিভৃত পল্লী টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি জাতির মুক্তির অগ্রদূত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন মাতৃক্রোড়ে প্রথম চোখ মেলেছিল যে শিশু , পরবর্তীকালে সে শিশুর পরিচিতি দেশের সীমারেখা অতিক্রম করে পরিব্যাপ্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। মা-বাবার আদরের খোকা, রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের সুপ্রিয় মুজিব ভাই, সমসাময়িকদের প্রিয় শেখ সাহেব থেকে মুক্তিকামী বাঙালির ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অর্জন করেন ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি এবং কায়েমি স্বার্থবাদীদের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে দেশবাসীকে (বাঙালি) মুক্তিসংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে, পরিচালিত করে, একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে হয়ে ওঠেন জাতির অবিসংবাদিত নেতা-জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।

বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম একাকার হয়েছে। এ তো শুধু একটি নাম নয়-ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক। ১৭ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনে এক ঐতিহাসিক দিবস। দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসাবে প্রতি বছর পালিত হয়ে থাকে। জাতির পিতার শুভ জন্মদিনে কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করতে প্রস্তুত আজ সমগ্র জাতি।

একদিন বলা হয়ে থাকতো যে, বাঙালিরা ব্যাঙের মতো, ঐক্যবদ্ধ মোর্চা গড়তে পারে না। “সাত কোটি বাঙালিকে হে মুগ্ধ জননী রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি(।)” মুজিব এই ধারণা পাল্টে দিয়েছিলেন। ঊনিশ শত আটচল্লিশ থেকে ঊনিশ শত একাত্তর, এই তেইশ বছরে আন্দোলন সংগ্রাম আর মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে আত্মনিয়ন্ত্রণ আর স্বাধিকার-স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশ ভূখন্ডের জনগোষ্ঠীকে একটি জাতীয় পরিচয় এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয় দিতে সহযোদ্ধা তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামরুজ্জামান হেনা, এম,এ আজিজ আর এক গুচ্ছ তরুণ তুর্কীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক দুর্ভেদ্য দুর্গ।

তিনি জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালির মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ’৪৮ থেকে ’৫২ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯ থেকে ’৭০-এ সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধস বিজয় অর্জন এবং পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাভাষীদের একমাত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম স্বদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে উঠেছিল। সকল প্রকার প্রাপ্ত সামগ্রী হাতিয়ার করা হয়েছিল তাঁরই নির্দেশনায়। তিনি বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বছরের পর বছর কারান্তরীণ থেকেছেন এবং একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এভারেজ বাঙালি থেকে লম্বায় অধিক শালপ্রাংশু এই মানুষটি বাঙালির স্বার্থের প্রশ্নে এবং নীতির প্রশ্নে কখনও আপোষ করেননি। আর সে কারণেই আপন হাতে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশে ঘৃণিত সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের হাতে আপোষহীন এই মানুষটিকে জীবন দিতে হয়েছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ। এই হচ্ছে ইতিহাস। এর বাইরে কোন ইতিহাস নেই। এর ব্যতিক্রম বিভ্রান্তি বৈ আর কিছু নয়। এর ব্যতিক্রম ইতিহাসের পাঠ থেকে সরিয়ে নিয়ে কুজ্ঝটিকায় ইতিহাসকে আবৃত করার অপপ্রয়াস মাত্র। তাই আসুন, এই রাষ্ট্রের সকলেই ইতিহাসের সঠিক পাঠ গ্রহণ করি এবং সমস্বরে আওয়াজ তুলি জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ