শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Mujib

/

এর সর্বশেষ সংবাদ

রাবির স্বাস্থ্য বীমার আওতায় ৮১৬ শিক্ষার্থী; পেয়েছেন প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক,রাবি

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে গতবছর পহেলা জুলাই থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চালু হয়েছে স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প। এ বীমা কার্যকর হওয়ার পর থেকে এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৮১৬জন শিক্ষার্থী ৪১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৪১ টাকা সুবিধা পেয়েছেন। এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীর ফাইল। যার অর্থের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দুই বছর মেয়াদী স্বাস্থ্য বীমার চুক্তি প্রক্রিয়া শুরু করে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তির ক্ষেত্রে (৩ মাসে ৪ বার) ৮০ হাজার টাকা ও বহির্বিভাগে (একদিনের হলেও প্রযোজ্য) ২০ হাজার টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতিমাসে একাধিকবার কনসালটেন্সি ফি, মেডিকেল ফি, প্যাথলজি ফি ইত্যাদি বাবদও এ অর্থ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বীমা চলাকালে মৃত্যু হলে সেই শিক্ষার্থী ২ লাখ টাকা পাবেন।

বীমা কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ৮১৬ জন শিক্ষার্থীকে এ সুবিধা প্রদান করেছেন তারা। যার অর্থের পরিমাণ ৪১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩’শ ৪১ টাকা। বীমা চলাকালে মৃত্যু হওয়ায় সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা পেয়েছে ফলিত গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীর পরিবার। এছাড়াও দেড় লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা পর্যন্ত এ সুবিধা পাচ্ছেন  শিক্ষার্থীরা। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে ফাইল প্রক্রিয়াধীন যার অর্থের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে বীমার শর্ত বহির্ভূত হওয়ায় আবেদনের ফাইল প্রক্রিয়াধীন আছে ৬৬টা যার অর্থের পরিমাণ প্রায় ৭ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বীমা সংক্রান্ত পরামর্শ এবং বিষয়গুলো তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কোন সেল নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের তত্বাবধানে এই বীমা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বীমা অনলাইন সিস্টেম হওয়ায় একজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ru.ac.bd প্রবেশ করলেই নিচে student insurance দেখাবে সেখানে ক্লিক করলে শিক্ষার্থীর আইডি নং ও রেজিষ্ট্রেশন নং দিলেই তার প্রোফাইল চলে আসবে। সেখানে ফরম পুরণ করে সাবমিট করলে ফরম পেয়ে যাবে বীমা কোম্পানি। যদি ফরমে ভুল তথ্য না থাকে তাহলে নিদিষ্ট সময়ে ওই শিক্ষার্থীর ব্যংক একাউন্টে বীমার টাকা চলে আসে। তবে বীমা শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো শিক্ষার্থী রোগে আক্রান্ত হলে তারাই শুধু এ বীমার সুবিধা পেয়ে থাকবেন। 

স্বাস্থ্য বীমা থেকে ৬৭ হাজার ৫’শ টাকা সুবিধা পেয়েছে একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, আমি একটি জটিল রোগের কারণে প্রায় ৪মাস অসুস্থ ছিলাম। আমার সুস্থ্য হতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বীমা থেকে আমি সুবিধা পেয়ে অনেক উপকৃত হয়েছি। তবে টাকা পেতে আমার অনেক বেগ পেতে হয়েছে। স্বাস্থ্য বীমায় যে জটিলতা রয়েছে তা কিছুটা কমিয়ে আনা উচিত বলে মনে করছেন এ শিক্ষার্থী। 

কিডনিতে পাথর হওয়ার ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাবত প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ঋণ করেছিলেন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আবু হাসনাত আবদুল্লাহর। পরে কাগজপত্র দেখিয়ে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আবেদন করলে ৭০ হাজার ৫’শ টাকার মতো সুবিধা পান তিনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য ৭০ হাজার টাকা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। আমি অনেক উপকৃত হয়েছি এ সুবিধা পেয়ে। তবে আমার এ সুবিধা পেতে প্রায় সময় লেগেছিলো তিন মাস। এক পর্যায় ভেবেছিলাম টাকাটা আর পাবো না কিন্ত আলহামদুলিল্লাহ পেয়েছি। স্বাস্থ্য বীমা সম্পর্কে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিদিষ্ট কোনো কার্যালয় নেই ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। এ বিষয়ে প্রশাসন নজর দিবে বলে আমি আশাবাদী। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেনিথ লাইফ ইন্সুইরেন্স কোম্পানির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ডেপুটি ভাইস প্রেসিডেন্ট) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন ১৫-২০টি ক্লেইম জমা পড়ছে। ফলে আমাদেরকেও এ চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেহেতু এ বীমা অনলাইন সিস্টেমের আওতায় ফলে রাতেও আমাদের বাসায় কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই বলে জানান তিনি।

এ সুবিধা পেতে অতিরিক্ত সময় নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী অসম্পূর্ণ কাগজপত্র দেয়ায় দাবি (ক্লেইম) পরিশোধে সময় লাগছে। এদিকে অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখনো ভালো করে জানে না। নিজের ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার না দিয়ে অন্যের একাউন্ট দিচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পিডিএফ ফাইল প্রদান করে থাকে কিন্তু আমাদের পিডিএফ ফাইল গ্রহনযোগ্য নয়। এগুলোর জন্য অনেক সময় কিছুটা সময় লাগে। তবে সময় কমিয়ে আনার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য বীমা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার প্রধান এ এইচ আসলাম হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পরামর্শে আমাদের এ স্বাস্থ্য বীমা চালু করা হয়েছিলো। বাৎসরিক ২৫০ টাকা প্রিমিয়ামে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ২লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২০ হাজার  টাকা পর্যন্ত তারা সুবিধা পাচ্ছে। একজন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য এটা অনেক বড় ধরনের সুবিধা। স্বাস্থ্য বীমা চালু হওয়ার পর থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে উপকৃত হয়েছেন এবং আবেদনকারী শিক্ষার্থীর এখন আরও বাড়ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, শিক্ষার্থীরা শারীরিকভাবে সুস্থ্য থেকে ক্যাম্পাসে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা করবে এটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশা। তবে, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে অসুস্থ্য হতে পারে।  মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থী হঠাৎ করে অসুস্থ্য হলে তাদের চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করা পরিবারের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বীমা চালু হওয়ায় পর থেকে এসব  শিক্ষার্থী এ সুবিধার আওতায় এসে অনেক উপকৃত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী জটিল রোগে আক্রান্ত তাদেরকেও দ্রুত এ সুবিধার আওতায় আসার আহবান জানান তিনি। 

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ