শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং গভীর মর্ম বেদনা নিয়ে বছর ঘুরে আমরা প্রতি পালন করতে যাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী। ১৯৭৫ এর পর থেকে অদ্যাবধি বাঙালি জাতি এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে থাকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম নিয়ে এই দিন আলোচনা হয়। এই দিনে বাঙালি তাঁর অবদান, স্বাধীন বাংলাদেশ এর কথা স্মরণ করে থাকে গভীর কৃতজ্ঞতায়। ইতিহাসে তিনি একমাত্র বাঙালি যিনি বাঙলা ভাষাভাষীদেরকে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। আধুনিক একটি জাতীয় রাষ্ট্র বাংলাদেশ। এর আগে বর্তমান অবয়বে আর কাঠামোতে বাঙালিদের নিজস্ব কোন রাষ্ট্র ছিলনা। ১৯৪৬ সনে ইংরেজদের শাসন কালের শেষ দিকে ভারত বর্ষের স্বাধীনতা, বিভক্তি ইত্যাদি ডামাডোলের মাঝে উত্থাপিত স্বাধীন বাংলা যুক্তরাষ্ট্রের (Independent United Bengal) প্রস্তাবের প্রবল প্রভাব পড়ে ছিল তদানিন্তন সময়ের তরুন ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের উপর। বাঙালিদের নিজস্ব রাষ্ট্রের আকাঙ্খা তাঁর রাজনৈতিক পরবর্তী কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে। এই আকাঙ্খা তাঁর রাজনৈতিক তথা রাষ্ট্রিক দর্শনেরও মূল কথা হয়ে উঠে। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ছাত্রজনতার ১১ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বিরোধী গণ-আন্দোলন- গণ-অভ্যত্থান এবং সর্বশেষ ৭০ এর নির্বাচন, এই সবের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ক্রমান্বয়ে তাঁর স্বাধীন বাংলার দর্শন কে এগিয়ে নিয়ে চলেন। এই সময়ে তাঁর সহযোগী হিসেবে যাঁদের পেয়েছিলেন তিনি-তাজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, এ.এইচ. কামরুজ্জামান, এম.এ. আজিজ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, শেখ আব্দুল আজিজ প্রমুখ – সোনায় সোহাগা হয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে বাঙালির মানস গঠনে এগিয়ে গেছেন তাঁরা। সাথে ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি, আব্দুর রাজ্জাক, সিরাজুল আলম খান আর তোফায়েল আহমদের ন্যায় তরুন তুর্কীরা। ভিত রচনাহয়ে ছিল স্বাধীনতার। মুক্তিযুদ্ধ সেই স্বাধীনতার বাস্তবায়ন করেছে। বঙ্গবন্ধুর এই সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে তিনি মোকাবেলা করেছেন কারাভোগ, ফাঁসির রশি এবং নানাবিধ যন্ত্রনাদায়ক অভিজ্ঞতার। কিন্তু পিছপা হননি তিনি, ধৈর্য্যহারা হননি তিনি এবং ভালোবাসা মানুষদের পারঙ্গমতার ওপর আস্থাহারাননি তিনি। অবিচল আস্থা আর আত্মবিশ^াস নিয়ে এগিয়ে গেছেন সামনের দিকে। সাহস আর প্রেরণা দিয়েছেন মহিয়সীপত্নী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (রেণু)। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আর শোষণ মুক্তির দর্শন ছিল তাঁর পাথেয়। পথ হারা তিনি হননি।
বঙ্গবন্ধু মুজিব নিজ বিশ^াসে এবং কর্মে অটল ছিলেন, অবিচল ছিলেন। তাই যারা বিপরীত মতাদর্শ তথা সাম্প্রদায়িকতা, কায়েমী স্বার্থবাদী ধনিক-বনিক গোষ্ঠী স্বার্থ ধারণ করে তারা তাঁকে তাঁর সরকারকে উৎখাত করার কাজে তৎপর হয়। ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের পথ ধরে ঘৃণ্য হায়েনারা সফলকাম হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ তাঁর সরকার উৎখাতে সক্ষম হয়। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সময়েসাম্প্রদায়িকতা আর ধনিক-বনিকের স্বার্থবাদীতা আর রাজনীতিহীন তার কার্যক্রম চালু হয়, যা অদ্যাবধি বহাল আছে। এই অবস্থার অবসান প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক রাজনীতির পুনরুত্থান প্রয়োজন। এই লক্ষ্যেই, মুজিবাদর্শে বিশ^াসীদেরকে আহবান জানাই আমরা, যাঁরা তাঁর জীবনাদর্শে বিশ^াসী।
র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, এমপি
একজন যুদ্ধাহত বীর মুুক্তিযোদ্ধা; উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক যায়যায়কাল।