যায়যায়কাল প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি ‘অতিমাত্রায় অনুগত্য’ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ‘বিতর্কিত ভূমিকার’ অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নেতৃস্থানীয় পদে থাকা আরো ২৯ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে সরকার।
মঙ্গলবার প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর স্বাক্ষরিত এক আদেশে কার্ডগুলো বাতিলের কথা জানানো হয়।
সাংবাদিকদের এই তালিকায় আছেন–
দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান
টিভি টুডের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল
দৈনিক কালের কণ্ঠের সাবেক সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন
ডিবিসি নিউজের প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম
দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন এর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন
দৈনিক বাংলা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরউল্লাহ শরাফত
দৈনিক আমাদের অর্থনীতি পত্রিকার সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি
মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন
এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী জহিরুল ইসলাম মামুন (জ ই মামুন)
আরটিভির সিইও আশিকুর রহমান
সময় টিভির সিইও আহমেদ জোবায়ের
দৈনিক ডেসটিনির উপ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী
এটিএন নিউজ এর বার্তা প্রধান নুরুল আমিন প্রভাষ
নিউজ ২৪ এর হেড অব নিউজ রাহুল রাহা
ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ ঘোষ সৈকত
একুশে টিভির হেড অব ইনপুট অখিল কুমার পোদ্দার
গাজী টিভির এডিটর রিসার্চ অঞ্জন রায়
দৈনিক ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক নাদিম কাদির
নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক দীপ আজাদ
বৈশাখী টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম
বাসস এর উপপ্রধান বার্তা সম্পাদক মো. ওমর ফারুক
বাসস এর নগর সম্পাদক মধুসূদন মণ্ডল
ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নাজনীন নাহার মুন্নী
দৈনিক পূর্বকোণের ঢাকা ব্যুরো প্রধান কুদ্দুস আফরাদ
দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি হায়দার আলী
দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি কিশোর কুমার সরকার
চ্যানেল আইয়ের বিশেষ প্রতিনিধি হোসনে আরা মমতা ইসলাম সোমা
নিউজ ২৪ এর সিনিয়র রিপোর্টার জয়দেব চন্দ্র দাশ
তাদের কার্ড বাতিল করার কারণ সুনির্দিষ্ট করে আদেশে বলা হয়নি। সেখানে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা ২০২২ এর ৬.৯, ৬.১০, ৯.৫, ৯.৬ অনুচ্ছেদ এর আলোকে তাদের কার্ডগুলো বাতিল করার কথা বলা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীর বলেন, “যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। মূলত বিগত সরকারের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তথ্য অধিদপ্তর নিজস্ব বিবেচনায় বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।”
এর মধ্যে নীতিমালার ৬ দশমিক ৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকরা রাষ্ট্রীয় কোনো আইন, বিধি বা নীতিমালা লঙ্ঘন করলে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন, বিধিবিধান ও নীতিমালা অনুসারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে, গুরুতর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করতে পারবেন। এক্ষেত্রে, পরবর্তীতে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটির সভায় তা উপস্থাপন করতে হবে।
৬ দশমিক ১০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মিথ্যা, হয়রানিমূলক, রাষ্ট্রদ্রোহী বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী কোনো সংবাদ প্রচারের অভিযোগে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের হলে এবং ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল হলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নামে ইস্যু করা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটি প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারবে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে কমিটি কার্ডটি বাতিল করতে পারবে।
৯ দশমিক ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিক/সংবাদকর্মী বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত ‘কোড অব কনডাক্ট’ অথবা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ‘প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা’-র কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে তার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হবে এবং বাতিল সংক্রান্ত আদেশ তথ্য অধিদপ্তর তাৎক্ষণিকভাবে জারি করবে।
৯ দশমিক ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়, এই নীতিমালার যে কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে অথবা অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে প্রধান তথ্য অফিসার প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল বা স্থগিত করতে পারবেন।
এর আগে ২৮ অক্টোবর ২০ সাংবাদিক ও ব্যক্তির প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে তথ্য অধিদপ্তর (পিআইডি)।
পিআইডির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীরের সই করা আদেশে বলা হয়, প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালার আলোকে এসব সাংবাদিকের অনুকূলে তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
যেসব সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করা হয়েছে- প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ, একাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক ও বিশেষ প্রতিনিধি ফারজানা রুপা, ওমেননিউজ২৪ ডটকমের সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদা ইয়াসমিন, দ্য ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, এবিনিউজ২৪ ডটকমের প্রধান সম্পাদক সুভাস চন্দ্র সিংহ রায়, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক সৈয়দ বোরহান কবীর, এটিএন নিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক মুন্নী সাহা, আমাদের সময় ডটকমের প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, দৈনিক মুখপাত্রের সম্পাদক মুহাম্মদ জামাল হোসাইন, দৈনিক বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফরাজী আজমল হোসেন, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, দৈনিক ঢাকা টাইমসের সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মিথিলা ফারজানা, বৈশাখী টিভির বার্তা প্রধান অশোক চৌধুরী এবং ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা।