শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্ববরেণ্য শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান-এঁর ২৯তম প্রয়াণ দিবস উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : বিশ্ববরেণ্য শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান-এর ২৯ তম প্রয়াণ দিবস ১০ অক্টোবর। দিনটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৯-১০ অক্টোবর দুইদিনব্যাপী চিত্রপ্রদর্শনী, আর্টক্যাম্প, শিশুদের পত্রলেখা প্রদর্শনী, পালাগান, পুতুলনাট্য প্রদর্শনী এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
২ দিনব্যাপী আয়োজনের ১ম দিনে আজ ৯ অক্টোবর সোমবার বিকাল ৪ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে শিল্পী এস এম সুলতানের প্রতিকৃতিতে অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় । এরপরে শিল্পী এসএম সুলতানের শিল্পকর্ম এবং শিশুস্বর্গের শিশুদের অঙ্কিত চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পরে শিশুদের নিয়ে গ্যালারি পরিদর্শন করেন তিনি। শিল্পী এসএম সুলতানের জীবদ্দশা ও তাঁর চিত্রকর্মের নানান দিক শিশুদের তুলে ধরেন তিনি।
বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের ৪০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে। এছাড়া শিল্পীকে নিয়ে আঁকা দেশবরেণ্য বিভিন্ন শিল্পীদের চিত্রকর্মও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এ প্রদর্শনী ৯ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
প্রদর্শনী উদ্বোধন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত যে ক্যানভাসে আঁকি, শিল্পী এসএম সুলতান তা আঁকতেন না। তিনি গ্রামীণ চট দিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্যানভাস তৈরী করে ছবি আঁকতেন। নিজেই রঙ তৈরী করতেন, মাটি, গাছের ছাল-পাতা দিয়ে রঙ তৈরী করতেন।‘
তিনি আরো বলেন, ‘তাঁকে হৃদয়ে ধরে রাখতে প্রতি বছর নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে আমরা তাকেঁ আরো বেশি বেশি স্মরণ করি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক, লিয়াক ত আলী লাকী বলেন- ‘আমরা সবসময়ই খুঁজে বেড়াই আমাদের গর্ব ও গৌরবের জায়গা, সেই জায়গাগুলো তৈরী করেছেন শিল্পী এসএম সুলতান এঁর মতো মহান শিল্পীরা। সেই গৌরবের জায়গাগুলোই আমাদের লালন ও চর্চা করতে হবে। তিনি যেভাবে কৃষকদের দেখেছেন সেভাবে আর কেউ দেখে নি গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে, গ্রামীণ সমাজকে”। শিল্পীর জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গৃহীত নানা কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালার কথাও তুলে ধরেন মহাপরিচালক।
সবশেষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন একাডেমির সচিব সালাহ উদ্দিন আহাম্মদ। আলোচনা সভার শুরু এবং শেষে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে একাডেমির শিশু সঙ্গীত দল। পরে প্রদর্শিত হয় শিল্পী এস এম সুলতানের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র ‘আদম সুরত’।
আগামিকাল ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের মৃত্যুদিবস উপলক্ষ্যে তাঁর জন্মস্থান নড়াইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানমালায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, নড়াইল এবং উপস্থিত থাকবেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম।
সকাল ৯ টায় নড়াইলে শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সকাল ৯.৩০ টায় শিল্পীর স্মৃতি সংগ্রহশালা নড়াইলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আর্টক্যাম্প আয়োজন করা হবে। সকাল ১০ টায় শিশুস্বর্গে শিশুদের লেখা পত্র প্রদর্শনী ও পাপেট শো প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি নড়াইলে আলোচনা সভা ও তথ্যচিত্র ‘আদম সুরত’ প্রদর্শিত হবে। বিকাল ৫ টায় পরিবেশিত হবে পালাগানের আসর। এছাড়াও বিশ্ববরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বছরব্যাপী কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এর আগে গত ১০ আগস্ট শিল্পীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারাদেশের বরেণ্য চারুশিল্পীদের অংশগ্রহণে আর্টক্যাম্প, নৌবিহার সহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
লাল মিয়া, যিনি জীবনের মূল সুর-ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, কৃষক এবং কৃষিকাজের মধ্যে। আবহমান বাংলার সেই ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস তার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফুটে উঠে, বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন যিনি, তিনি বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট শেখ মোহাম্মদ সুলতান তৎকালীন পূর্ব বাংলার নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তার আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তার আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুলতানের প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন৷ পাশাপাশি রেখাচিত্র আঁকতেন ।শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিও বাজাতেন। ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ সালে বিশ্ববরেণ্য শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ