বাবুল খাঁন, নিজস্ব প্রতিবেদক: বান্দরবান থানচি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লা মং মারমা। পলাতক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্য শৈ হ্লার আস্থাভাজন ছিলেন।
এই চেয়ারম্যান প্রভাব বিস্তার করে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ও টেন্ডারবাজিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। থানচি উপজেলার সকল কাজের নিয়ন্ত্রণের জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৬ বছরে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়।
নির্বাচনী হলফনামার তথ্য মতে জানা যায়, ২০১১ সালে থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থীর হলফনামায় তার পরিবারের স্বর্ণালংকার, ফার্নিচার, নগদ টাকা, স্থাবর, অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬ লক্ষ টাকা। নির্বাচনের বিপুল ভোটের ব্যবধানের মৌজা হেডম্যান মাংসার ম্রো নিকট হেরে যান।
২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হলফনামায় উল্লেখ্য করেন, তার পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ৮ লাখ টাকা। সেবারও নির্বাচনে পরাজিত হন। পরাজিত হওয়ার উপহার হিসেবে পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান ।
২০১৮ সালে ফের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সম্পদের হিসাব বিবরণীতে সম্পদের পরিমাণ ৮ লাখ টাকা থেকে ৬০ লাখ টাকা উন্নীত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর ৫ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে, প্রতি মাসের ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা গ্রহণ করেন তিনি। ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের অংশ নিলে হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ দেখান ১ কোটি ৮৬ লাখ ২৩ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানচি আলিকদম সড়কে ২৮ কিলো নামক স্থানে অংপুং ম্রো ও রুমবেত ম্রো দুই গ্রামের ৬০ পরিবারের উপকারভোগী দেখিয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন রাঙামাটি কার্যালয় হতে ২০১৯ সালে মোট ২৭ লাখ টাকার বরাদ্দ নেন প্রায় ৩০ একর পাহাড়ি জমি। অবৈধ উপায়ে দখল করে ঝিরিতে বাঁধ নির্মাণ ও ফলজ বাগান বাড়ি করেছেন । সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান থোয়াইহ্লামং মারমা ও তার ছোট ভাই থোয়াইপ্রু অং মারমা দখলকৃত জমিটি বর্তমানে বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা হবে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।
অনুসন্ধানের জানা যায়, থানচি বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের মুখে একটি দোকানের প্লট ৬০ লাখ টাকা স্থানীয় রুপক চৌধুরী নিকট থেকে ক্রয় করেন। বর্তমান দোকানটির বাজার মূল্য দেড় কোটি টাকা বলে ধারণা করেছেন অনেকে। থানচি সদর ইউনিয়নের আমতলী পাড়া ১০ শত পাহাড়ি জমি ক্রয় করে ২০২২ সালে জমিতে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করেন তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে সে জমির বাজার মূল্য এক কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয়রা। বলিপাড়া ইউনিয়নের ভরট চাকমা পাড়া ১০ একর জায়গা উপর ফলজ বাগানের মূল্য বর্তমানে এক কোটি টাকা ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও বান্দরবান জেলা সদরে লেমু ঝিরি বৌদ্ধ বিহারের সামনের ৫০ শতক জায়গা কিনেছেন এক কোটি টাকা দিয়ে।শহরের উজানি পাড়ায় মরহুম খোকন মাস্টার হতে ১০ শতক জায়গা কিনেন দেড় কোটি টাকা দিয়ে। মধ্য পাড়ায় একটি ফ্ল্যাট কিনেন ৭০ লাখ টাকায়।
থানচি ভাত ঘর রেস্টুরেন্টের সত্ত্বাধিকারী আবদুল কাদের বলেন, আমি সাবেক চেয়ারম্যানের স্ত্রী হ্লামেচিং নিকট ৫ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করিতেছি। মাস শেষে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই থোয়াইপ্রু আমার থেকে ভাড়া নিয়ে যান।
জনমনে প্রশ্ন হচ্ছে, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা হলে ৫ বছরে মোট দেড় কোটি টাকা গ্রহণ করেন। থানচি উপজেলা পরিষদে প্রতি মাসের ৪০ হাজার টাকা হলে ৫ বছরে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১০ বছরে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা সরকারি ভাতা গ্রহণ করেন তিনি।
তার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান , পরিবারে তার মাসিক খরচ ৬০ হাজার টাকা। কারণ তিনি জেলা পরিষদের সদস্য থাকার সময় পাজারো গাড়ির তৈল, ভাড়া, ড্রাইভার বেতনসহ খরচ হয়েছে বলে দাবি করেন। ২০১৪ থেকে ১৮ পর্যন্ত তার বৈধ আয় দেড় কোটি। তার খরচ ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৮ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের তার মাসিক খরচ ১ লাখ টাকা হলে ৪০ হাজার টাকা সম্মানি ভাতা পেয়ে অতিরিক্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার।
এত সম্পদের মালিক হলেন কি করে? এমন প্রশ্ন থানচি উপজেলাবাসীর। তদন্তের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে সুবিধাভোগী এই চেয়ারম্যানের শাস্তি নিশ্চিত হোক এমনটা দাবি এলাকার সচেতন মানুষের।
পালিয়ে আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানের মুঠোফোনের বার বার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।