শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

টাঙ্গাইলে আস্তর বালুকে ভিটি বালু দেখিয়ে নিলামে বিক্রির অভিযোগ

কবির হোসেন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল): টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রায় ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু (পস্নাস্টার বালু) মাত্র ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি মাটি হিসেবে দেখিয়ে নিলামে কম দামে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি ভূঞাপুরের পলশিয়া মসুদ চেয়ারম্যানের ঘাটে অভিযান চালিয়ে আস্তর বালু জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর পরিমাপ করে দেখা যায় সেখানে ২৬ লাখ ঘনফুট বালু রয়েছে। অবশ্য স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা ধারনা করছেন সেখানে অন্তত ৬ লাখ ঘনফুট বালু রয়েছে। সেই বালু গত ৭ জানুয়ারি নিলামের মাধ্যমে এক টাকা ৮৫ পয়সা ঘনফুট হিসেবে মোট ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়। এরপর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
টাঙ্গাইল জেলায় একমাত্র উপজেলা ভূঞাপুর। যেখানে নির্মাণ বালু বা প্লাস্টার বালুর পাওয়া যায়। এ উপজেলার প্রায় ৪০টি স্পটে দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণ বালু বিক্রি হয়ে থাকে। এসবের প্রায় ৩৫টি স্পটে সিরাজগঞ্জের শিমলা ও চন্ডাল বয়রা বালু মহাল থেকে ব্যবসায়ীরা বালু কিনে এনে ভূঞাপুরের বিভিন্ন স্থানে স্তূপ করে রাখেন। পরে সেগুলো ট্রাকযোগে বিক্রি করেন।
সম্প্রতি উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পলশিয়া এলাকার চেয়ারম্যানের ঘাট হিসেবে পরিচিত বালুঘাটে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। সেখানে স্তূপ করে রাখা ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু তিনি জব্দ করেন।
তবে স্থানীয়রা জানায়, সেখানে কোনো ভিটি বালু (নিম্নমানের বালু) নেই। যা আছে তার সবই সিরাজগঞ্জ থেকে কিনে আনা আস্তর বালু (প্লাস্টার বালু)।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, জব্দকৃত ২৬ লাখ ঘনফুট বালু কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সহকারী কমিশনার তার নিজের ইচ্ছামতো নিলাম ডাকেন। এছাড়া কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। আস্তর বালুর দাম অনেক বেশি হওয়ায় কম দামের ভিটি বালু দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করে দেওয়ায় সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, ওই ঘাটে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু রয়েছে। জহুরা ইন্টারপ্রাইজকে মাত্র এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে ৬০ লাখ ঘনফুট বালু মাত্র ২৬ লাখ ঘনফুট দেখিয়ে নিলামে পাইয়ে দেন সহকারী কমিশনার। এ কাজ করতে তিনি অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। সুবিধা নিয়ে একদিকে বালুর পরিমাণ কম দেখানো হয়েছে এবং অন্যদিকে আস্তর বালু(প্লাস্টার বালু) নিম্নমানের ভিটি বালু দেখিয়ে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। এটা চরম অনিয়ম। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি স্থানে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট আস্তর বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আর এ বালু প্রতি সেফটি ছয় টাকা দরে বিক্রি হয়। তবে এ আস্তর বালুই নিলামে উঠে হয়ে গেছে ‘ভিটি বালু’। এতে সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদের স্ত্রী শেফালি মাসুদ বলেন, প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ঘনফুট প্লাস্টার (নির্মাণকাজে ব্যবহৃত) বালুকে ২৬ লাখ ১২ হাজার ৮০০ ঘনফুট ধরে এবং বালুর ধরণ ভিটি বালু দেখিয়ে নিলাম দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ধরা হয়েছে ১ টাকা ৮৫ পয়সা ঘনফুট। অথচ প্রতি ঘনফুট বালু সাধারণত বিক্রি হয় ১০-১৪ টাকায়।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তারিকুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ২৬ লাখ ঘনফুট ভিটি বালু জব্দ করা হয়। পরে সেগুলো নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক টাকা ৮৫ পয়সা দরে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। সেখানে কোনো আস্তর বালু নেই। তিনি জানান, পাশের ময়মনসিংহ সহ কয়েকটি জেলায় এভাবেই নিলাম করা হয়- এ কারণে তিনিও করেছেন।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. পপি খাতুন জানান, জব্দ করা বালু কীভাবে নিলামে তোলা হয়েছে তা তিনি জানেন না। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) বিস্তারিত জানেন এবং তিনিই ভালো ব্যখ্যা দিতে পারবেন।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ