
যায়যায় কাল প্রতিবেদক: এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া উপেক্ষা করে জেনারেলদের মতকে অগ্রাধিকার দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন এফ ড্যানিলোভিচ।
শনিবার সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকারী যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ উপরাষ্ট্রদূত বলেন, ২০০৭-০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বড় ভুল করেছিল, মার্কিন সাবেক কূটনীতিক হিসেবে আমি এটি প্রথম স্বীকার করছি। তবে রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস কিংবা আমার সহকর্মীরা ১/১১ ঘটাননি। কোনো গোপন ‘কফি গ্রুপ’ বাংলাদেশের জনগণকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিল এমনটা আমি মনে করি না। তবে ’৯০ সালে গণতন্ত্রের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, তা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছিল।
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে আনতে মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন। এক-এগারোর সময় জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারদের মতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ কী চায়, সেটিকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। আমরা নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু আমরা সেনাবাহিনীর কথাই বেশি শুনেছি। হয়তো সে কারণেই গণতন্ত্রের উত্তরণ নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সাবেক এই মার্কিন কূটনীতিক বলেন, ওই সময়ে দেশ হিসেবে এবং ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস হিসেবে আমরাও নির্বাচনের সময়সীমার ওপরই বেশি জোর দিয়েছিলাম। এটি আমাদের দ্বিতীয় ভুল ছিল। নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে জনগণের দীর্ঘ সময়ের রায় (ম্যান্ডেট) ছাড়া কোনো সরকার পরিচালিত হতে পারে না। আর নির্বাচিত সরকারকে প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত।
এক-এগারোর সময়ে সংস্কারের প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সময় মৌলিক কিছু সংস্কার সাধনের প্রয়োজন ছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংস্কারের এজেন্ডাও এগিয়ে নিচ্ছিল। কিন্তু একসময় এসে যখন নির্বাচন আয়োজন করে দায়িত্ব হস্তান্তরই প্রধান অগ্রাধিকার ছিল এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল, তখনই সে সময়ের সরকার রাজনৈতিক দলের ওপর থেকে তাদের সব ধরনের প্রভাব হারিয়ে ফেলল।
জন এফ ড্যানিলোভিচ বলেন, গোপনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া হয়েছিল। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কোন শর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আপসরফা করেছিলেন, সেটি আমাদের জানা সম্ভব ছিল না। আমরা এর কোনো পক্ষ ছিলাম না। সে সময়ে আমরা ধারণা করেছিলাম শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
সংস্কার প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এখন সংস্কারের বিষয়ে যা করছে, তা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার প্রতিফলন। এখনকার জটিল পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে যুক্ত করে বেসামরিক সরকারের গুরুত্ব তুলে ধরে সংস্কারের বিষয়ে যেভাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বিআইআইএসএস মিলনায়তনে ‘নতুন ভোরের পথে ঢাকা: গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন গতিপথ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ড্যানিলোভিচ ছাড়াও বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিক বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের ভূমিকা ও নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করেন।