
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর বাঘায় বিএনপি-জামায়াতের পাল্টা পাল্টি ছয়টি মামলায় ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সহ আসামী করা হয়েছে ২৭৯ জন। মারপিট, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে একে অপরকে দায়ি করে জামায়াতের পক্ষ থেকে চারটি এবং বিএনপির পক্ষে দু’টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ কোন পক্ষেরই কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ নিয়ে জনমনে অসন্তোশ বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠেছে থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে, ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় বাউসা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজিব আহমেদ মন্ডলকে কুপিয়ে জখম ও লুটপাটের অভিযোগে একই এলাকার আবদুস সামাদের ছেলে বিএনপির নেতা সাজদার রহমান ২ এপ্রিল বাদি হয়ে জামায়াত-শিবিরের ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২৫-২৬ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এ মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে বিএনপির নেতা আবদুর রহিমকে।
অপর দিকে ৩ এপ্রিল বাউসা গ্রামের আসেদ আলীর ছেলে বিএনপির নেতা আকরাম আলী বাদি হয়ে জামায়ত নেতা মজিবর রহমানকে প্রধান আসামী করে ২৪ জনের নাম উল্লেখ-সহ আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ দিকে বিএনপির নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী কর্তৃক নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১ মার্চ দিঘা গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে জামায়াত নেতা রুমন আলী বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পক্ষান্তরে দিঘা গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে ও বাউসা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মজিবর রহমান বাদি হয়ে ১ এপ্রিল বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমকে প্রধান আসামী করে ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ২২-২৩ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেছেন। এ ছাড়াও ৩ এপ্রিল বাদি হয়ে বিএনপির নেতা শরিফুল ইসলামকে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে তিনি আরো একটি মামলা করেন।
এর আগে বাউসা গ্রামের ইয়াজ আলীর ছেলে জামায়াত নেতা আবদুর রহিম বাদি হয়ে ২ এপ্রিল বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিমকে প্রধান আসামী করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামী করে অপর আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ইউনুস আলী বলেন, বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জনগণ নানা মুখি সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হয়ে আসছে। আমরা এর প্রতিবাদে ২০ মার্চ মানববন্ধন করতে গেলে বিএনপি নেতারা আপমাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এর জের ধরে ৩০ মার্চ বাউসা ইউনিয়নের ১ নম্বর দীঘা ওয়ার্ড ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি সৌরভ আহম্মেদের উপর হামলা করা হয়। এবং শিবির কর্মী মারুফ হোসেন, মুন্না আলী ও ফয়সাল হোসেনকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে যখম করা হয়।
এছাড়াও বাউসা বাজারে জামায়াত সমর্থিত মিজানুর রহমান ও রুহুল আমিনের ওষধের দোকান, মিজানুর রহমানের সার ও কীটনাশকের দোকান, জহুরুল ইসলামের জুতা স্যান্ডের দোকান, রোহানের স-মিলে এবং ইমারত শ্রমিক টুটুল হোসেনের দোকানে হামলা, ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতির বাড়িতে বাদাম লুট করে বাড়ি ভাংচুর এবং ৫টি মোটরসাইকেল ভাংচুর-সহ একটি ভ্যানে আগুন দিয়ে জালিয়ে দেয় বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফকরুল হাসান বাবলু বলেন, ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় জামায়াতের লোকজন অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাউসা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি রাজিব আহমেদ মন্ডলকে কুপিয়ে জখম করেছে। এরপর থেকে সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবিতে আমরা প্রথক দুটি মামলা করেছি।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে জামায়াত শিবির মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের জের উপজেলা সদরে এনে সংবাদ সম্মেলন সহ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাদের নেতা কর্মীরা পাল্টা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।
সার্বিক বিষয়ে বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.ফ.ম আসাদুজ্জামান বলেন, বিএনপির-জামায়াতের পাল্টাপাল্টি ৬টি মামলায় ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয়েছে ২৭৯ জনকে। তবে ঘটনার সাথে জড়িতরা আত্নগোপনে থাকায় কোন আসামীকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।