শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্যহাতির আক্রমণে গৃহবধূর মৃত্যু, পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন

মো. ওসমান গণি ইলি, কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংঝা ইউনিয়নের জানারঘোনা এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে রিয়া মনি (১৯) নামের এক তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন।

নিহত রিয়া মনির বাড়ি জানারঘোনা ফুটখালি জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায়। রিয়া মনি একজন অটোরিকশাচালকের স্ত্রী।

তিনি তার ১৪ মাস বয়সী শিশুকন্যাসহ স্বামীর সঙ্গে সরকারি বনভূমিতে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন।

জানারঘোনা এলাকার এই অংশটি মূলত পাহাড় ও বনঘেরা। যেখানে বহু পরিবার আজও অনিরাপদভাবে বসবাস করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে রিয়া মনি পাশের খালার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি দলছুট বন্য হাতি হঠাৎ তার পথরোধ করে আক্রমণ করে। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রিয়া মনির এমন আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

শুক্রবার সকালে নিহতের মরদেহ দাফনের উদ্দেশ্যে বাবার বাড়িতে নেওয়া হলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে উপস্থিত হন। তার সঙ্গে ছিলেন ঝিলংঝা রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা ও বনবিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা।

তারা রিয়া মনির স্বজনদের সান্ত্বনা জানান। তার শিশু সন্তানের খোঁজখবর নেন এবং পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, “এই দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা নিহতের পরিবারের পাশে আছি। শিশুটির ভবিষ্যৎ যাতে সুরক্ষিত হয়, সেটিও আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”

স্থানীয়রা জানান, জানারঘোনা এলাকার সরকারি বনভূমিতে বহু অসহায় পরিবার আজও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। বন্য হাতির চলাচল ও আক্রমণ এখানে নতুন কিছু নয়। তাঁরা অবিলম্বে বনবিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।

এ বিষয়ে কক্সবাজার বনবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বন্য হাতির চলাচলের রুটে যদি কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করে, তা সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করতে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

রিয়া মনির এই মর্মান্তিক মৃত্যু শুধুই একটি দুর্ঘটনা নয়—এটি পাহাড়ি অঞ্চলের অনিরাপদ জীবনব্যবস্থা, বন সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস এবং প্রশাসনিক নজরদারির প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। আর সেই প্রেক্ষাপটে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিনের মানবিক ভূমিকা স্থানীয়দের চোখে যেন নতুন এক মাদার তেরেসা।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *