
মো. বেল্লাল হোসাইন নাঈম, নোয়াখালী: প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণের অশ্লীল ছবি-ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করার হুমকিতে এক কিশোরীকে ৭ বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বাবু নগর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল করিমের ছেলে রাহাত হোসেনের বিরুদ্ধে। অতঃপর ধর্ষণের ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে পারিবারিকভাবে রাহাতের সঙ্গে ভিকটিমের বিয়ে হয়।
শনিবার সকালে জেলা শহর মাইজদীতে একটি সংবাদ মাধ্যমের অফিসে সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিমের মা খায়রুন নেছা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।
খায়রুন নেছা অভিযোগ করে বলেন, রাহাত আমার আপন ভাইয়ের ছেলে হয়। রাহাত আমার কিশোরী কন্যার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের অশ্লীল ছবি-ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর যাবৎ বাসাবাড়ি’সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে ভিকটিমকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ভিকটিম রাহাতকে বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে তার চাচাত ভাই শামীমকে দিয়ে ভিকটিমের অশ্লীল ছবি-ভিডিও আত্মীয়-স্বজনের মুঠোফোনে ছড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ঘটনার জানাজানি হলে আমি আমার বড়ভাই অভিযুক্তের চাচা আবদুর রহিমকে জানাই। প্রথমে তারা এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাননি। পরে আইনের ভয়ে পাঁচদিন যাবৎ সালিশ বৈঠকের পর ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে রাহাত ও ভিকটিমের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু ওই সময়ে ভিকটিমকে নিজ বাড়িতে নিতে অস্বীকৃতি জানায় রাহাত। পরে দীর্ঘ ৬ মাস পর ভিকটিমকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে তুলে নিতে রাহাতকে চাপ প্রয়োগ করলে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন অভিযুক্ত রাহাতের চাচা আবদুর রহিম।
খায়রুন নেছা বলেন, আমি গরিব মানুষ। আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। আমার পক্ষে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়া সম্ভব হবে না। তার পরও মেয়ের জীবনের চিন্তায় ধার-দেনা করে ৫ লাখ টাকা সংগ্রহের পর অভিযুক্ত রাহাতের চাচা আবদুর রহিমের কাছে দিই। কিন্তু বাকি ১৫ লাখ টাকা না দেয়ায় তারা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে রাহাতের বাড়ি যাই। ভিকটিমকে ঘরে তোলার দাবি জানালে আবদুর রহিম, রাহাতসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা আমি এবং আমার মেয়েকে মারধর করে। পার্শ্ববর্তী এলাকার কাজী ডেকে মেয়েকে দিয়ে জোরপূর্বক তালাক নামায় স্বাক্ষর নেয়। এবং মেয়ের হাতে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করে। ভিডিও ধারণ শেষ হলে তারা পুনরায় টাকাগুলো সব হাতিয়ে নিয়ে আমাদেরকে বাড়ি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়।
নির্যাতনের শিকার ভিকটিম বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ছবি-ভিডিও ধারণ করে রাহাত। ওই অশ্লীল ছবি-ভিডিওর ভয় দেখিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর রাহাত আমাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছে। আমার সব কেড়ে নিয়েছে। আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা যেন তার সামনে না যাই এবং তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ কোথাও না করি, সেই জন্যে রাহাত আমাকে হুমকি দিচ্ছে। সে বলছে, যদি তার বিরুদ্ধে কথা বলি তাহলে আমার অশ্লীল ছবি-ভিডিও সব ভাইরাল করে দিবে, আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে লাশ গুম করবে। ধর্ষক রাহাত, তার দোসর আবদুর রহিম ও শামীমের হাত থেকে বাঁচতে এবং তাদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী এবং তার পরিবারের সদস্যরা।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম জানান, খায়রুন নেছা নামের এক নারী এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।