
কাবিল উদ্দিন কাফি, সিংড়া (নাটোর): বিধৌত চলনবিল জুড়ে ছেয়ে আছে সৌন্দর্যের সমারোহ। বছরের একেক সময় একেক সৌন্দর্য ধারণ করে এই চলনবিল। বর্ষা জুড়ে চলনবিলের নানান সৌন্দর্য সোভিত করলেও শুকনো মৌসুমে দর্শকদের মন মাতায় এই অতিথি পাখি।
দেশের মিঠা পানি মাছের প্রধান উৎস চলনবিল যে শুধু মাছের জন্যই বিখ্যাত তা কিন্তু নয়, কয়েক হাজার কিলো পথ পারি দিয়ে আসা শীতের অতিথি পাখি ও দেশী প্রজাতি পাখির জন্যও এ বিলের বেশ সুনাম আছে। অতিতে ইংরেজদের কাছে চলনবিলের পাখি আর মাছের বেশ কদর ছিল। শীতের শুরুতেই এবছর চলনবিলের মাঠ জুড়ে অতিথি পাখির দেখা মিলেছে। পরিবেশবীদরা বলছেন, অবাধে পাখি শিকার বন্ধ হলে বিলে পাখির সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
সম্প্রতি নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিল অধ্যুষিত জোড়মল্লিকা, নিংইন, সাতপুকুরিয়া, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি, কাউয়াটিকরী সহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বিলের পানি নেমে যাওয়ায় জেগে উঠা মাঠে খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে অতিথি পাখির দল। তাদের কিচির মিচির শব্দ আর পাখার ঝাপটানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলের পরিবেশ। কখনো ডানা মেলে আকাশে উড়ছে আবার কখনো মাটিতে নেমে খাবারের সন্ধান করছে। এ যেন এক অন্যরকম প্রকৃতি। এসময় অনেক পাখি প্রেমিরাও পাখি দেখতে আসছেন বিলে। চলনবিলে সাধারনত ছোট সারস পাখি, বড় সারস, কাঁদখোচা, রাতচরা, হারগিলা, ভাড়ই, নলকাক, ডাহুক, হুটটিটি, চখাচখি, বুনো হাস, বালি হাস সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তবে এবছর বালি হাস, রাতচরা ও তিরশুল প্রজাতির পাখি বেশি দেখা মিলেছে।
বেরাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহাগ সরদার বলেন, প্রশাসন ও পরিবেশকর্মীদের সচেতনতায় পাখি শিকার অনেকটাই বন্ধ হওয়ায় আগের চেয়ে বিলে পাখির সংখ্যা বেড়েছে। তবে কিছু অসাধু শিকারী এখনও রাতের বেলায় পাখি শিকার করছেন। এসব বন্ধের দাবি জানাই।
পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি মোল্লা মো. এমরান আলী রানা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনেই মুলত চলনবিলে পাখির বিচরন আর আগের মত নাই। বিলে আগের মত দীর্ঘ সময় পানি থাকে না। এছাড়া কৃষি আবাদে যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহার করায় পাখি সহ বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে খাল খননের পাশা পাশি বিলের নীচু এলাকায় মাছ ও পাখির অভয়াশ্রম হিসাবে ঘোষনা করতে হবে
পরিবেশকর্মীরা বলেন, শীত প্রধান দেশ থেকে দীর্ঘ পথ পারি দিয়ে এসব পরিযায়ী পাখি আমাদের চলনবিল সহ দেশের হাওড়-বাওড় ও নদী এলাকায় আসে। চলনবিলে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যায়। আমরা শুধু শীতের অতিথি পাখি নয় দেশী প্রজাতি সহ সব ধরনের পাখি শিকার বন্ধে সবসময়ই মনিটরিং করছি। জনসেচেতনতা বাড়াচ্ছি। আগামীতে আশা করছি চলনবিলে পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে। পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় পাখি শিকার বন্ধ সহ তাদের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করার জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।