
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ: ৩৬ বছর ধরে হাতে সওয়ার হয়েছে চানাচুর ও চাল ভাজার ভার। বয়স পেরিয়েছে প্রায় ৭০, এখন আর হাঁটতে চান না তিনি। কিন্তু হাত থেকে সেই ভার নামাতেও পারছেন না। কারণ হাতে করে বিক্রি করা চানাচুর ও চাল ভাজার বিক্রির কারণে দুমুঠো খাবার জোটে বৃদ্ধা নুরিয়া খালার।
তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রাম পাঙ্গাসী এলাকায়। স্বামী ও ছেলে মারা যাওয়ার পর দুই মেয়েকে চানাচুর আর চাল ভাজা বিক্রি করে ভাইদের সহযোগিতায় বিয়ে দিয়েছেন। এখন সংসারের জোয়াল হাতে ক্লান্ত বৃদ্ধা নুরিয়া।
উপজেলা সদরসহ আশেপাশে বিভিন্ন হাটে বাজারে হাতে চানাচুর, বুট ও চাল ভাজা ফেরি করে বিক্রি করেন। তার কাছ থেকে চাল ভাজা, চানাচুর কিনে খাচ্ছেন উপজেলার সর্বস্থরের মানুষ।
জীবনযুদ্ধে বৃদ্ধা নুরিয়া খালা বলেন, আমি খুব অভাবি। আবাদি জমি-জমা নেই। যা ছিলো তার স্বামীকে চিকিৎসা করতে শেষ হয়ে গেলেও তাকে বাঁচানো আর সম্ভব হয়নি । ঠিক ১৯৮৮ সাল থেকে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ফেরি করে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন । স্বামী আর ছেলে সন্তান মারা যাওয়ার পরে অবশেষে দুই মেয়েকে নিয়ে সংসারে ব্যস্ত নুরিয়া খালা । মেয়ে দুইটাকে বিয়ে দিয়ে এখন তিনি এক মেয়ের জামাই বাড়িতে থেকেই এসব খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার।
তার এমন চিত্র দেখে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবী মামুন বিশ্বাস সহযোগিতাও করেন বৃদ্ধা খালাকে। তার সহযোগিতা দিয়েই ছাগল, হাস মুরগী পালন করছেন তিনি। মাত্র ৯’শত টাকা পঁজি নিয়ে এসব খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করে প্রতিদিন ৩’শ থেকে সাড়ে তিনশত টাকা ইনকাম হয় বলে জানান। যা আয় হয় তা দিয়ে ছাগল,হাস মুরগী পালনসহ জীবন চালাচ্ছেন বৃদ্ধা খালা নুরিয়া।
তিনি আরো বলেন, এই বয়সে শরীরটা চায় বিশ্রাম। কিন্তু বিশ্রাম করলেও তো ক্ষিদেটা যায় না। পেটের তাড়নায় হাতে চানাচুর ও চাল ভাজা নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ফেরি করে বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, ৭০ বছর বয়সের কোনো মা জীবন-জীবিকার তাগিদে ভার হাতে নিয়ে চানাচুর ও চালভাজা বিক্রি করছেন কি না জানি না। আমি করছি প্রায় ৩৬ বছর ধরে এ কাজ। ছেলে-মেয়ে মানুষ করতে গিয়ে জমাতে পারিনি এক টাকাও। অনেক সময় ধার-দেনা করেও চলতে হয়। এ বয়সে হাতে করে চানাচুর, চালভাজা, বুট বিক্রি করার শক্তি নেই। পুরো শরীরে ব্যথা। দু-মুঠো খাবারের জন্য এসব করতে হচ্ছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সাঈদী হাসান সাগর বলেন, সরকার ও মানিবক সংগঠন গুলোর কাছে তার এই ৯শ’ টাকার পুঁজি বাড়িয়ে সহযোগিতা করে ভিক্ষা নয় ব্যবসার মাধ্যমে হালাল ভাবে ইনকাম করে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আহবান জানান তিনি।
রায়গঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার ইলিয়াস হোসেন বলেন, তিনি যদি বিধবা অথবা বয়স্ক ভাতা পেয়ে না থাকেন তাহলে আমরা তকে এ ভাতার আওতায় নিয়ে আসব। তিনি বা তার পরিবার সহযোগিতার আবেদন করলে তাকে সহযোগিতার জন্য গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখব।