
নিজস্ব সংবাদদাতা: বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা আবার বেদখল, এ যেন ইতিহাসের বুকে নির্মাণকাজের নাম করে ঠেলা-ধাক্কা! সরাইলের কালিকচ্ছ গ্রামে অবস্থিত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের জন্মভিটা আবারো বেদখলের মুখে। যে বাড়িতে বাংলার এক সুসজ্জিত বিপ্লবীর আদর্শ গড়ে উঠেছিল—সেই বাগবাড়ির উঠানে এখন গাঁথা হচ্ছে কংক্রিটের পিলার।
এই বাড়িটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, এটি একটি যুগের প্রতীক, একটি জাতির আত্মপরিচয়ের স্মারক। দীর্ঘ আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের ফলে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে গেজেটভুক্ত করে সংরক্ষণের ঘোষণা দেয় এবং সেখানে সরকারিভাবে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। কিন্তু সব অর্জন ধূলিসাৎ করে ৫ আগস্ট, নতুন সরকার গঠনের পরের দিন, রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয় সেই সাইনবোর্ড। এরপর শুরু হয় নির্মাণকাজ—অবৈধভাবে প্রত্নসম্পদে হস্তক্ষেপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঐতিহাসিক বাড়ির উঠানে স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আহামেদ উল্লাহ দাবি করছেন, তিনি ভারত থেকে আগত উল্লাসকর দত্তের এক আত্মীয়ের কাছ থেকে জায়গাটি কিনেছেন। অথচ এই বাড়ি যে গেজেটভুক্ত প্রত্নসম্পদ—সেই বিষয়ে কোনো তোয়াক্কা নেই।
১৯৬৮ সালের ১৪ নম্বর ‘পুরাকীর্তি সংরক্ষণ আইন’-এর ১১ ধারা অনুযায়ী, প্রত্নসম্পদ ধ্বংস বা বিকৃতি করলে জেল, জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এত বড় আইনভঙ্গের ঘটনাতেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরবতা স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
এই ঘৃণ্য ঘটনায় বিস্ময় ও নিন্দা জানিয়েছেন সাহিত্যিক কবি জয়দুল হোসেন, জেলা উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ, সরাইল উদীচীর সভাপতি মোজাম্মেল পাঠান, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, কবি তালুকদার আবুল কাশেম এবং সংস্কৃতিসেবী শাহিনুল মৃধা। তাঁরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেন।
স্থানীয় জনগণও প্রশ্ন তুলেছেন—“একজন বিপ্লবীর স্মৃতি কি এতটাই মূল্যহীন হয়ে পড়েছে? জাতির গর্ব, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার বাতিঘর কি কেবলই বাণিজ্যিক স্বার্থে বিসর্জন দেওয়া যাবে?”
সরাইল তথা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিটি সচেতন মানুষের একটাই দাবি—উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিবাড়ি যেন অবিলম্বে অবৈধ দখলমুক্ত করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এই দাবিই নয়, এটি সময়ের সাথে লড়াই, এবং ইতিহাসকে রক্ষার আর্তনাদ।