শনিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণ

যে কারণে ৪৫ দিনেই পদত্যাগে বাধ্য হলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক: লিজ ট্রাস হুংকার দিয়েছিলেন তিনি আয়রন লেডি খ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের মতো কঠোর হবেন। গত ১৯ অক্টোবরও পার্লামেন্টে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে হুংকার দিয়েছিলেন, ‘আমি ফাইটার, চলে যেতে আসেনি’। কিন্তু তিনি অটল থাকতে পারেননি। মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় তিনি বাধ্য হলেন ক্ষমতা ছাড়তে। পদত্যাগ করে ২০০ বছরে ব্রিটেনের সবচেয়ে কম সময়ের প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ড করলেন।

বৃহস্পতিবার ব্রিটেন সময় দুপুর ১টা ৩২ মিনিটে তিনি দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয়ের সামনে এসে লিজ ট্রাস ঘোষণা করেন, তিনি আর দায়িত্বে থাকছেন না। তিনি এই ৪৫ দিনের মধ্যে নিজে ডুবেছেন, নিজ দলকে ডুবিয়েছেন, একই সঙ্গে নিজ দেশের অর্থনীতিকে তলানিতে নিয়ে গেছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার বিশ্লেষণে লিজ ট্রাসের পতনের কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো:
কর ছাড়ের অপরিকল্পিত বিশাল প্যাকেজের ঘোষণা: লিজ ট্রাসের সময়ের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ডের (৫০ বিলিয়ন ডলার) কর ছাড়ের প্যাকেজ ঘোষণা। যা চার দশকের মধ্যে তীব্র মুদ্রাস্ফীতির মধ্যেও কোনো প্রকার বিশ্লেষণ ছাড়াই ব্যক্ত করেন তিনি, যদিও এর কোনো বিকল্প অর্থায়নের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরা হয়নি। এতে অর্থসংস্থান করতে সরকারকে হাজার হাজার কোটি পাউন্ড ঋণ নিতে হতো। ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের দর পড়ে যায়, তার সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া- এসব যুক্ত হয়ে ব্রিটেনের অর্থনীতির সংকট মাত্র অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এক গুরুতর চেহারা নেয়।

এযাবৎকালে পাউন্ডের দাম সর্বনিম্নে: লিজ ট্রাসের অনুদানবিহীন বিশাল কর ছাড়ের সিদ্ধান্ত পাউন্ড ও ব্রিটিশ বন্ড খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যা ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দাম সর্বকালের সর্বনিম্নে ঠেলে দেয় এবং আসন্ন সংকটের আশঙ্কায় ‘দ্য ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ বাধ্য হয় পেনশন খাতের অস্থিতিশীলতা ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করতে।

পার্লামেন্টে বিশৃঙ্খলা: লিজ ট্রাস প্রশাসন, দল এবং পার্লামেন্ট- সর্বত্রই তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে চরম ব্যর্থ হন তিনি। বরং একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধেই সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম সময়ে এমপিদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ এবং তাকে উৎখাতের চেষ্টা করার গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

উচ্চ পদস্থদের প্রস্থান: ৪৫ দিনের মধ্যে দু’জন শীর্ষ মন্ত্রীকে হারান লিজ ট্রাস। প্রথমে অর্থনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ওঠা বিতর্ক সামলাতে অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ারটেংকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হন ট্রাস। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগ করেন, যা প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া অনুগতদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন ট্রাস। এর মধ্য দিয়ে তিনি দলের উপর তার কর্তৃত্ব চালানোর চেষ্টা করলে ক্ষোভ তৈরি হয়। এতে বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ এবং বাজার নিয়ে বেসামাল পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৪ অক্টোবর কোয়ার্টেংকে বরখাস্ত করেন ট্রাস। যিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মিত্র বলে পরিচিত।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *