
শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীতে ধর্ষণের ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে আসামিরা।
পরিবারটির অভিযোগ, আসামিরা মাঝে মাঝে গ্রামে এসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তাদের ধরছেন না। এর পেছনে কাজ করছে বিএনপির সুবিধাবাদী কতিপয় কিছু অসাধু ব্যক্তিরা।
তবে পুলিশের বক্তব্য, আমরা আসামি ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের তথ্য দিতে বলেন। ঘুরে বেড়ালে আমাদের জানাতে বলেন।
গত সোমবার সন্ধ্যার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা আহ্বায়ক নাহিদুল ইসলাম সাজু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেসুর রহমান বিজয়, এনসিপির রাজশাহীর সংগঠক ফাতিন মাহমুদ ভিকটিমের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় ভিকটিমের মা কান্না জড়িত কন্ঠে ধর্ষণের করুণ কাহিনি বর্ণনা করেন। সব কথা শোনার পর পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন এই নেতারা।
নাহিদুল ইসলাম সাজু জানান, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবো। পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলবো। আসামি গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হবে।
ভিকটিমের পরিবার জানায়, মামলার আগের রাতে আমরা থানায় যাওয়ার সাথে সাথে সোরাউদ্দিন (পশু ডাক্তার) সহ ২ জন থানায় অবস্থান করেন । মামলা না করার জন্য বলেন তারা। এমনকি আমাদের বলেন, মামলা করলে আসামিদের লোকজন ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে দেবে। আমরা নান্দপাড়া যেতেই মর্তুজা, সোনা আমাদের মীমাংসার জন্য বলতে থাকেন। কিন্তু আমরা আত্মীয়ের সাথে কথা বলে থানায় মামলা করতে গেলে বসিয়ে রেখে পরের দিন বিকেল ৪ টার দিকে মামলা নেন। আমরা অসহায়, গরিব মানুষ। সরকারের দেয়া বাড়িতে বসবাস করছি। বর্তমানে খুব আতঙ্কিত। আমরা ন্যায়বিচার চাই। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় লোকজন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, আমরা ভয়ে আছি। যারা এর সাথে জড়িত তারা খুব খারাপ মানুষ। বিএনপির স্থানীয় নেতারা মীমাংসার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে চাপ দিচ্ছে। কিছু বলেছি জানলে বিপদে পড়ে যাবো। আসামিদের মাঝে মাঝে এলাকায় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করছে না। তবে আমরা চাই, দ্রুত আসামি গ্রেফতার হোক। অসহায় পরিবারটি বিচার পাক।
উল্লেখ্য, ২৭ মে সন্ধ্যার পর রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে। মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত থেকে থানায় অবস্থান করলেও অজ্ঞাত কারণে মামলা না নিয়ে গড়িমসি করে পুলিশ ।
তবে ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ, মামলা না নেয়ার পেছনে কাজ করেছে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। একপর্যায়ে ২৮ মে বুধবার বিকেল ৪ টার দিকে থানায় মামলা নেয় পুলিশ। উপজেলার কাঠালবাড়িয়া এলাকায় ওই ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম খলিল।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার উপজেলার ঝালুকা ইউনিয়নের কাঠালবাড়িয়া এলাকায় স্থানীয় চাচার বাড়িতে বেড়াতে আসে ওই স্কুলছাত্রী। রাতে চাচার বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফেরার পথে স্থানীয় রমজান আলীর ছেলে রাশেদ (৩০), তার দুই সহযোগী রকিব (৪০) ও আসলাম (৪২) মিলে ওই ছাত্রীকে হাত-মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে পাশেই একটি পেয়ারা বাগানে ধর্ষণ করে। ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে রাশেদ ও তার দুই সহযোগী পালিয়ে যায়।
দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দুরুল হোদা জানান, স্থানীয় রাশেদ নামের এক যুবক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তবে মামলার ৭ দিন পার হলেও গ্রেফতার না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।
অন্য একটি মামলার সূত্র ধরে বলেন, কক্সবাজার থেকে আসামি ধরে এনেছি। আর এদের ধরছি না এটা ঠিক না। যদি আসামিদের কেউ দেখে তবে তাদের ধরতে সহোযোগিতা চান এই কর্মকর্তা।
আসামি গ্রেফতার না হওয়ার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন), রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে, বিষয়টি নিয়ে ক্রাইম বিভাগে কথা বলার পরামর্শ দেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো শরিফুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি আসামিদের নাম জানতে চাইলে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন।
তিনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। কথা শেষে হোয়াটসঅ্যাপে নাম-পরিচয় পাঠানো হয়।