ডা. মো. সাইফুল ইসলাম: এ দেশের অকুতোভয় দামাল সন্তানেরা বিদেশী শাসকদের তাড়িয়ে দিয়েছে একথা সত্য, কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে দুষ্ট রাজনীতি ও অসৎ প্রশাসন জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে, ফলে স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরও এদেশে গড়ে ওঠেনি জবাবদিহি মূলক প্রশাসন, প্রতিষ্ঠিত হয়নি সাংবিধানিক প্রাধান্য ও প্রতিষ্ঠা পায়নি যথার্থ স্বাধীন বিচার বিভাগ। ফলে অনিয়ম, অন্যায়, অসত্য নিয়মনীতির অপব্যবহারই পেয়েছে প্রাধান্য। যথার্থ নিরপেক্ষ আইন সভা, দূর্নীতিমুক্ত শাসন বিভাগ ও যথার্থ স্বাধীন বিচার বিভাগ ছাড়া দূর্নীতিমুক্ত ও সন্ত্রাস মুক্ত রাষ্ট্র গড়ার আশা করা আকাশ কুসুম কল্পনা করা ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাজননৈতিক নেত্রীবৃন্দের দাম্ভিকতা, পরমতসহিষ্ণুহীনতা, প্রতিহিংসা, ব্যক্তিপূজা ও অর্থের প্রভাব রাজনৈতিক পরিবেশকে একবারেই কলুষিত করে ফেলেছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই শিশু বাংলাদেশকে পূনঃগঠনের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, যে আন্দোলনটি আমরা করতে পারিনি। বরঞ্চ শিশু রাষ্ট্রকে নিয়ে আমরা খেলতে শুরু করলাম, সে খেলাটি এখন পর্যন্ত চলছে। ফলে আমরা শুধু ভৌগলিক স্বাধীনতাই পেয়েছি, পাইনি ব্যক্তি স্বাধীনতা; আসেনি অর্থনৈতিক মুক্তি, সৃষ্টি হয়নি সুস্থ রাজনীতি; অর্থাৎ সবকিছু থেকে আমরা আজ বঞ্চিত। ঘরে ঘরে পৌছে দিতে পারিনি স্বাধীনতার সুফল, এ সর্বনাশা খেলার মরণ ছোবল থেকে যদি দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে চান ও মুক্তভাবে বিচরণ করতে চান তাহলে প্রয়োজন গণ আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিপ্লব। গণ আন্দোলন, সংগ্রাম ও বিপ্লব ছাড়া অর্থনৈতিক মুক্তি স্বয়ং সম্পূর্ণতার অগ্রগতি, সুস্থ রাজনীতি, স্থিতিশীল সংসদ ও মুক্ত জীবন মোটেই সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে হয়তো কিছু প্রশ্ন বারবার আপনাদের বিবেক ও মনকে দংশন করছে, তা হলো সুনির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব ছাড়া আদৌ কি কোন বিপ্লব সম্ভব?
বর্তমানে আমাদের দেশে আদৌ কি কোন নিরপেক্ষ, অবাদ, মুক্ত মন চেতনা ও চেতনা বোধের মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে? কে দিবে এই গণ মানুষের নেতৃত্ব? কার পতাকাতলে সমবেত হবে অধিকারকামী সকল মানুষ? যেমনটি ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমষ্টিগত আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলিম লীগের নিতৃত্বে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারির জাতীয়তা বোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমষ্টিগত আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের পক্ষের নেতৃত্বে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং ২১শের চেতনায় সমষ্টিগত আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দলমত নির্বিশেষে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
ফলে ১৬ই ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স্ ময়দানে পাকিস্তানি যোদ্ধাদের কবর রচনা করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে আমরা কি পাচ্ছি। আমরা বাস্তবে যা পাচ্ছি তা হলো, দলের নিতৃবৃন্দ ভালবেসে নিজেকে, ভালবাসে দলকে, দেশ ও দেশের মানুষকে কেউ ভালবাসে না। দলকেও যে নিবেদিত প্রাণ হিসেবে ভালবাসে তাও জোর দিয়ে বলা যাবে না। সর্বোপরি তারা স্বার্থকে ভালবাসে। যার প্রমাণ একটু ব্যক্তি স্বার্থে বেঘাত গঠলেই হঠাৎ করে নেতৃবৃন্দ দল বদল করতে দ্বিধাবোধ করে না। দল বদল করা আজকাল নেতৃবৃন্দের কালচারে পরিণত হয়েছে। আর রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই এ যুক্তি দিয়ে একেবারেই ফেরেস্তার মতো নিজেকে একজন সেবক হিসেবে জাহির করছে। ধারাবাহিক ভাবে দেশী-বিদেশী শাসক মহলের চরিত্র পর্যালোচনা করলে আমরা কি পাচ্ছি? ইংরেজ শাসক মহল কুট জ্ঞান ও শক্তির মাধ্যমে এই উপমহাদেশে সার্কভুক্ত জনগণের উপর শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল। পাকিস্তানি শাসক মহল ধর্মের নামে তাদের প্রভুত্ব অটুট ও শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছিল এবং স্বাধীনতার পর থেকে বাঙ্গালি বা বাংলাদেশী শাসক মহল জাতীয়তাবাদের ছত্র ছায়ায় শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। শাসক বৃন্দের এই শোষণ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় যে সত্যটি বের হয়ে আসছে তাহলো চোরের যেমন ধর্ম নেই, সন্ত্রাসীর যেমন দল নেই, ঠিক তেমনি শোষকেরও ধর্ম, জাতি, জাতীয়তা ও জাতীয়তাবোধ নেই। শোষক, শোষকই। এ ছাড়া ইংরেজ শাসক বৃন্দ জানতো ও বুঝতো যে, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না।
কাজেই শিক্ষা থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখতে পারলেই চিরদিন তারা,, তাদের প্রভুত্ব ও শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। এ কাজটিই তারা অব্যাহত রেখেছিল। কুচক্রী পাকিন্তানি শাসক মহল অনুধাবন করতে পেরেছিল যে বাঙ্গালি জাতি যদি জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে তাদের প্রভুত্ব ও শোষণ প্রক্রিয়া টিকে রাখা খুবই কঠিণ হবে। তাই তারা মাতৃভাষার উপরে ষ্টিম রোলার চালিয়েছিল। বাংলাদেশের শাসকবৃন্দের ধ্যান ও ধারণা এই যে, বাঙ্গালি জাতি যদি প্রকৃত জ্ঞান ও মেধা বিকাশের সুস্থ পরিবেশ পায়, তাহলে সুস্থ মানুষ সৃষ্টি হবে। সুস্থ মানুষ সুষ্টি মানেই দেশপ্রেমিক মানুষ সৃষ্টি হওয়া। কাজেই সুস্থ মানুষ যাতে সৃষ্টি হতে না পারে সে কারণে জ্ঞান ও মেধা বিকাশ কেন্দ্রগুলো অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে অসুস্থ রাজনীতির অপতৎপরতা অব্যাহত রেখে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই ধ্বংস করে ফেলেছে। ইংরেজ, পাকিস্তানি ও বাঙ্গালি বা বাংলাদেশী শাসক মহলের চরিত্রের কোন পার্থক্য দেখা যায় কি? বিদেশী শাসকদের আমরা তাড়িয়েছি, দেশী শাসকদের ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে, কিন্তু শোষণ প্রক্রিয়াটি অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত বললে ভুল হবে। দ্রæত গতিতে বেড়েই চলেছে। আর এ কারণে ধরে নেওয়া যায় যে, ইংরেজ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত যতগুলো শাসক বৃন্দ এসেছে তাদের চরিত্রের কোন পার্থক্য দেখা যায় নাই। বরঞ্চ শোষণ ও দুর্নীতির অতি মাত্রা যোগ করে শাসনকার্য পরিচালনা করে আসছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা শোষণ ও দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠা অন্যায়, অসত্য ও অনিয়মের বিষাক্ত ছোবল সমগ্র পরিবেশকে আক্রান্ত করে ফেলেছে। সুস্থ পরিবেশ ছাড়া সুখে শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করা মোটেই সম্ভব নয়। সুস্থ পরিবেশই সুন্দর জীবন গড়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে। সুস্থ পরিবেশ গড়ার জন্য আলোকিত অর্থাৎ উন্নত আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন এবং রুচিতে, মননে উচ্চায়ত মানুষের প্রয়োজন। আর এই আলোকিত মানুষ মূলত দু’টি জায়গা থেকে জন্মায়। একটি হলো জাতির শিক্ষাঙ্গণ অর্থাৎ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়। অপরটি হলো-পরিবার। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের বয়স পঞ্চাশোর্ধ্ব পেরিয়ে চলেছে কিন্তু দেশে আলোকিত ও উচ্চায়ত মানুষ জন্মের এই দু’টো সুযোগের কোনটাই আজ সুলভ নয়। গত কয়েক দশকে আমাদের দেশের
শিক্ষাঙ্গনগুলো ¤øান ও নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। হতাশা ও সন্ত্রাস কবলিত ছাত্র সমাজ, আদর্শ বর্জিত শিক্ষক সমাজ, অদূরদর্শী ও অকার্যকর শিক্ষা পদ্ধতি সবকিছু মিলিয়ে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন ও আদর্শ মানুষ গড়ে উঠতে দিচ্ছে না। আর এ কারণে আমাদের পরিবার ব্যবস্থাও হচ্ছে অসংগঠিত ও অনুপযোগী। ফলে পরিবার থেকেও আলোকিত মানুষ সৃষ্টি হচ্ছে না। তাহলে কিভাবে সমগ্রজাতি অসুস্থ পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবে? মুক্তির পথ কি আদৌ আছে? দারিদ্র্যতা আজ আমাদের অভিশাপ নয়। অভিশাপ হচ্ছে, অসুস্থ রাজনীতি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। যার কারণে সর্বত্র অশান্তি আর আতংক, চর্তুদিকে কেবল দুঃসংবাদ এবং দুঃসময়ের হাতছানি। আইন-শৃঙ্খলা, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়াও বাঙ্গালি জাতির গর্ব, অহংকার, ঐতিহ্য ও রক্তে কেনা অর্জনগুলো যা বহিবিশ্বে অনন্য গৌরবজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাও আজ ¤øান হতে চলেছে। বাঙালির দর্পণে গোটা বিশ্বের নিপীড়িত, নির্যাতিত, শোষিত, বঞ্চিত ও অধিকার আদায়ে পিছিয়ে পড়া মানুষ দেখতে পাচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ। আমাদের চেতনা ও চেতনা বোধ আজ সীমানা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রæয়ারি, ভাষা আন্দোলন আজ বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া শুধু ভাষা শহীদদেরকেই মহিমান্বিত করেনি, বিশ্বের সকল মায়ের মর্যাদাকে উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেই সাথে আমাদের মহান একুশ সারা বিশ্বে অমরত্ব লাভ করেছে। বাঙালি জাতির রক্তে ঝরা একুশ ও একাত্তর আজ গোটা বিশ্বের অবহেলিত ও নিগৃহীত মানুষের অধিকার আদায়ের দিক নির্দেশিকা, সহায়ক শক্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। আমাদের অতীত আজ বিশ্বের সকল মানুষের হৃদয় আঙ্গিনা জুড়ে আসন পেতে বসেছে। কিন্তু বর্তমান? বর্তমানে সমস্ত পরিবেশই ভয়ঙ্কর ভাবে দূষিত, দুর্গন্ধময় ও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এই দূষিত পরিবেশ প্রতি মুহূর্তে অশান্তি বৃদ্ধি করছে, বপন করছে বিশৃঙ্খলার বীজ। বাংলাদেশের এহিন অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এ কোন বাংলাদেশ, যে দেশে প্রতিদিন চলছে মানুষ খুনের প্রতিযোগিতা, খুনের বদলা খুন, এ যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু ভয় নিত্য অপ্রতিরোধ্য গতিতে তাড়া করে চলেছে। এ অবস্থাকে বধ্যভূমির সাথেও তুলনা করা যায় না, তুলনা করা যায় না কসাইখানার সাথেও। শুধু বিবেকের স্পর্শকাতর অংশে বিষাক্ত কাঁটার মতো বাঁধে একটি প্রশ্ন আমরা কোথায় আছি। চারদিকে একি বীভৎসতার আয়োজন। ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের একি উন্মুক্ত উল্লাসে পৈশাচিক
নৃত্যে মেতে উঠেছে মানুষরূপী নরপিশাচেরা। প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত আসে যায়, আর অকাল প্রয়াত মানুষের রুদ্ধশ্বাস গোঙ্গানি ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, আতংকে শিহরিত, সময় চমকে উঠে। অপমৃত্যুর কালোছায়ায় ঢাকা পড়ে জনপদ। বিবেকবান মানুষের রক্তাক্ত আত্মার ক্রন্দন মিশ্রিত শ্লোগান আজ চারিদিকে। বিবেকবান মানুষ সইবে কেমন করে মানবিকতার দলন-মন্থন? একমাত্র উদ্মাদ আর দানব ছাড়া সবাই আজ আতংকিত। সবাই সুস্থ পরিবেশ কামনা করছে। চাচ্ছে একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অনাচার আমাদের সবটুকু-স্বস্তি, শান্তি ও মাধুর্য কেড়ে নিচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জরুরী। এ মহা সত্যটি উপলব্ধিও করছে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সর্বোপরি সবাই অর্থাৎ দেশের সিংহভাগ মানুষ বর্তমানে বিদ্যমান ব্যবস্থা ও চলমান প্রক্রিয়ার অবসান চায় এবং সমালোচনাও করছে, অব্যবস্থার বিরুদ্ধে অহরহ বলেই চলেছে অবিরাম ধারায়। স্বাধীনতার পর থেকে অবিরাম গতিতে একে অপরের ভুলত্রæটি, দোষ, অসত্য, প্রহসন, প্রতারণা ও প্রতিশ্রæতিসর্বস্ব রাজনীতির অশুভ চক্রের অপতৎপরতার কাছে জাতি জিম্মি হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় বিপদসীমা অতিক্রম করতে শুরু করেছে। ফলে ন্যায়, সত্য, মানবতা, মানবিক মূল্যবোধ নেতৃবৃন্দের মধ্যে নেই বললেই চলে। অপকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে এদেশে চলে আসছে মাত্র। মানুষের জীবন যেমন একটি চলমান প্রক্রিয়া, ঠিক তেমনি রাজনীতি একটি জীবনঘনিষ্ট চলমান প্রক্রিয়া। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দ্বারা জীবনঘনিষ্ট চলমান প্রক্রিয়াটি চরমভাবে আক্রান্ত হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থতায় ভুগছে। এই অসুস্থ জীবন প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে সমাজ জাতি ও দেশের মঙ্গল আশা করা যায় কি? এ প্রশ্নটি আজ সবার কাছে ক্রমশঃ দানা বেঁধে উঠেছে।
কিন্তু কেন রাজনীতিবিদরা বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তন চান না। এটিও একটি জরুরী প্রশ্ন বটে। আর কতদিন জাতিকে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে? সব কিছুরই একটা সীমা আছে। ধৈর্যরও একটা সীমা অবশ্যই আছে। এ সীমা অতিক্রম করলে সমূহ বিপদ অবধারিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কেন বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল? মুক্তিযুদ্ধের কাছে কিবা চাওয়া-পাওয়া ও প্রত্যাশা ছিল? দেশে অকুতোভয় দামাল সন্তানেরা একটি মাত্রই প্রত্যাশা নিয়ে বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। যে প্রত্যাশাটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি সিভিল সমাজ অর্থাৎ সশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। যে সমাজে মানুষ মানুষের শত্রæ হবে না, মিত্র হবে। বৈষম্যের পাহাড় কমিয়ে শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার ধারা প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু কেন জাতির সেই প্রত্যাশা আজ চোরাবালিতে হারিয়ে গেল? হারিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী কে? অতীত না বর্তমান? রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আজ অতীতকে ভুলে গিয়েছে। ভুলে গিয়েছে একুশ ও স্বাধীনতার অঙ্গীকার। একুশ শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, একুশ বাঙালি জাতির এমন এক জীবন ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় রয়েছে দর্শনীয়ভাবে নিজেকে উপভোগ, উপহার ও উপস্থাপন করার দিক নির্দেশনা। একুশ আমাদের ভবিষ্যৎ, সুস্থ ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থার নিশ্চয়তার প্রতীক। একুশ আমাদের দর্পণ। এ দর্পণেই খুঁজে পাবো আমাদের সকল সমস্যা সমাধানের পথ। একুশের প্রকৃত শিক্ষা কি? শিক্ষা এই যে, সমষ্টির পক্ষে কোন বিজয়ই অসম্ভব নয়। বাঙালির মিত্র কে? প্রধান মিত্র বাংলা ভাষা। এই ভাষা আমাদের পরিচয়ের চিহ্ন ও ঐক্যের সূত্র। এই ঐক্যের সূত্রই বাঙালি জাতির একমাত্র মুক্তির পথ। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একুশের চেতনা ও স্বাধীনতার সিঁড়িকে পদদলিত করে ভ্রান্ত পথে ধাপিত হচ্ছে। ফলে বর্তমান হয়েছে আক্রান্ত, ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকার তাতে কোন সন্দেহ নেই।
লেখক: ডা. মো. সাইফুল ইসলাম
কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
চিলাহাটি, ডোমার, নীলফামারী।