ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: পুরো গ্রামজুড়ে একটিমাত্র ঘর। ওই ঘরের বাসিন্দা দুই স্বামী-স্ত্রী ছাড়া গোটা গ্রামে আর কোনো মানুষের অস্তিত্ব নেই।
যে দেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব এক হাজার ১৭১ জন, সেখানে একটি গ্রামে মাত্র দুজন মানুষ থাকার এ ঘটনা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের এ গ্রামটির নাম উমানাথপুর। আর এ গ্রামের দুই বাসিন্দা হলেন দলিল লেখক সিরাজুল সরকার (৭৫) ও তার স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন (৬০)।
এর আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, এখানকার ভূমি মানচিত্রেও এ গ্রামের অস্তিত্ব আছে। উমানাথপুর নামে রয়েছে আলাদা মৌজাও। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান এ গ্রামটির।
উমানাথপুর গ্রামের একমাত্র বাড়িটি ২৫ শতক জমির ওপর। রয়েছে দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর ও পুকুর। এই বাড়ি ও এর আশপাশ ঘিরেই গ্রামটি।
গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ। আশপাশের গ্রামগুলো হলো—রামগোবিন্দপুর, হরিপুর, উদয়রামপুর, রাধাবল্লভপুর, সাহেবনগর, চন্দ্রনগর, ব্রম্মিনগাতি, চড়াকোণা ও রামকৃষ্ণপুর।
উমানাথপুরের একটিমাত্র বাড়ির কর্তা সিরাজুল সরকার জানান, সাড়ে তিনবছর আগে তার ছেলে শরীফুল আলমের মৃত্যুর তার বিধাব স্ত্রী দুই সন্তান নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রীই এখানে আছেন।
গল্পে গল্পে জানা যায়, সিরাজুল সরকারের বাবা রমজান আলী সরকার ১৯৬৫ সালে পাশের রামগোবিন্দপুর গ্রাম থেকে এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন । বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তিনি পরিবার নিয়ে এ বাড়িতে বাস করছেন। তার আরেক ভাই কাছাকাছি হরিপুর গ্রামে থাকেন।
সিরাজুল সরকারের বাবা স্থানীয় রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচবারের নির্বাচিত ওয়ার্ড মেম্বার ছিলেন । সিরাজুল নিজেও এই ইউনিয়ন থেকে দুইবার ওয়ার্ড মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে জানান বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল আলী ফকির।
সিরাজুল সরকারের অভিযোগ, একটি মহল তাকে এখান থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে । এ কারণে দেড় বছর আগে তিনি ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন। এখনো হুমকি পাচ্ছেন।
রামগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক পারভেজ বলেন, বাল্যকাল থেকেই আমরা এ উমানাথপুর গ্রামের অস্তিত্ব দেখে আসছি। এই গ্রামের একমাত্র বাড়িটিতে যাতায়াতের রাস্তাটি প্রশস্ত করে দিলে বাড়িরে লোকজনের চলাচলে অনেক সুবিধা হতো।
বিষয়টি নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, উমানাথপুর গ্রামটি পরিদর্শন করে সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেবেন তিনি।