শনিবার, ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চীনের উপহারের হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে তিস্তা এলাকা পরিদর্শন

নুরুল ইসলাম, গাইবান্ধা: চীনের অর্থায়নে উপহারের হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে রংপুরে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর মৌজার চর কলাগাছি এলাকা পরিদর্শন করেন হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল, গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদীসহ অন্যরা।এ সময় তারা চর কলাগাছিতে থাকা ১শ একর খাস জমির মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ২০ একর জায়গা পরিদর্শন করেন। এরপর চীনা কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সর্ব উৎকৃষ্ট জায়গায় নির্ধারণ করবেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ বলেন, ভারত যেদিন চিকিৎসা ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে সেদিনই চিকিৎসা ক্ষেত্র বাংলাদেশিদের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এই সম্ভাবনাকে সফল করতে চীনা কর্তৃপক্ষ রংপুর বিভাগে বিশ্বমানের ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভৌগোলিক অবস্থান ও বিভাগীয় সদর দপ্তর বিবেচনায় রংপুর জেলায় এই হাসপাতাল স্থাপন করার বিষয়টি এখন গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজীব বলেন, রংপুর বিভাগে দেড় কোটির বেশি মানুষের জন্য উন্নত চিকিৎসা সুবিধার অভাব রয়েছে। রোগীরা প্রায়ই হৃদ্রোগ বা ক্যান্সারের মতো চিকিৎসার জন্য ঢাকা বা ভারতে যান, যা উচ্চ ব্যয় এবং জটিলতার কারণ হয়। ভারতের কথিত চিকিৎসা ভিসা নিষেধাজ্ঞা স্বাস্থ্যসেবায় দেশীয় সক্ষমতা বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজন। রংপুরের একটি হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য বিকল্প প্রদান করবে।

তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রংপুর এগিয়ে যাবে। স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ স্বাস্থ্যসেবা উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত হবে। ভূ রাজনীতি, বিভাগের সেন্ট্রাল পয়েন্ট, নিম্ন আয়ের মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ জোন, স্থানীয় বেকারত্ব নিরসন, তিস্তা প্রকল্প নেয়ারেস্ট জোন, সব জেলার সঙ্গে আন্ত যোগাযোগ সুবিধা, বিদেশি চিকিৎসা সেবার বিকল্প হিসেবসহ সার্বিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

লহ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আমাদের সবাই স্বল্প আয়ের মানুষ। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে বাইরে দিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই। এ ছাড়া আমাদের এখানে খাস জমি আছে। এখান থেকে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। এ ছাড়া নদী ভাঙনে এখানকার মানুষ বাস্তুভিটা হারিয়ে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতে হয়। এ হাসপাতালটি যদি এখানে হয়, তাহলে হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বাড়বে কর্মসংস্থান। তখন আর তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থানের জন্য বাইরে যেতে হবে না। তাই আমরা চাই হাসপাতালটি যেন আমাদের এই তিস্তার পাড়েই হয়।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, হাসপাতাল নির্মাণের জন্য তিস্তা নদীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে গঙ্গাচড়ার একটি চর এলাকা পরিদর্শন করেছে চীনা প্রতিনিধি দল। গঙ্গাচড়ায় আধুনিকমানের হাসপাতাল হলে নদীভাঙনকবলিত এলাকার মানুষসহ উত্তরবঙ্গের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে রংপুরে ১ হাজার শয্যার একটি আধুনিক বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করবে চীন। চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে এই হাসপাতালটি উপহার হিসেবে দিচ্ছে দেশটি। হাসপাতালটি তিস্তা প্রকল্প এলাকার কাছে নির্মিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। গত রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *