পারভেজ আলম আদেল, স্টাফ রিপোর্টার: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার বিরাসার এলাকায় চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঘটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
ঢাকার শাহবাগ থেকে ছেড়ে আসা একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে একে একে বিস্ফোরিত হয় অন্তত ৮১৬টি গ্যাস সিলিন্ডার। আগুন ও বিস্ফোরণের ভয়াবহতায় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের ঘুমন্ত মানুষজন আতঙ্কে ঘর ছেড়ে বাইরে ছুটে আসে। বহু দূর থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মহাসড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
দুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটে যখন ট্রাকটি শহর বাইপাসের বিরাসার এলাকায় একটি বড় গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়। সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে মুহূর্তেই ট্রাকে আগুন ধরে যায়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ট্রাকভর্তি সিলিন্ডারগুলোর মধ্যে, যা একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। ফায়ার সার্ভিসের সরাইল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুইটি ইউনিট এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাস জানান, ধারণা করা হচ্ছে, আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল প্রাইভেটকারের ইঞ্জিন থেকে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে ট্রাকের গ্যাস সিলিন্ডারগুলোতে। সব সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ এক কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, মহাসড়কের দীর্ঘদিনের ভাঙাচোরা অবস্থা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবই এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। বৃষ্টির কারণে গর্তে পানি জমে থাকায় ট্রাকটির চাকা গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারায়।
অটোরিকশাচালক মাহাবুব রহমান সাকিব বলেন, “এই রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। রক্ষণাবেক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এত বড় গর্তে না পড়লে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোজাফ্ফর হোসেন জানান, “পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ শুরু করে। সকাল ৯টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলেছে। সৌভাগ্যবশত, কেউ হতাহত হননি। তবে সড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছিল।”
পরে বিকল্প রুটে শহরের ভেতর দিয়ে যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।
এই দুর্ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল দেশের মহাসড়কগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা নিয়ে। সময় এসেছে দ্রুত সংস্কার ও কার্যকর নজরদারির।
