যায়যায়কাল প্রতিবেদক: বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচারের অভিযোগে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম এবং তার স্বামী জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার রাজধানীতে দুদকের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য দেন সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, ”পরস্পর যোগসাজশে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডসহ ১২টি বাণিজ্যিক কোম্পানি এবং নামসর্বস্ব ভুয়া কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
অভিযোগটি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক সাইফুর রহমান।
তারা ইউসিবিএল, ব্যাংক এশিয়া, ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এনবিএল, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথইস্ট ও এবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেননি বলে অভিযোগ পেয়েছে দুদক।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রদবদলের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনের সাইদা মুনা তাসনীমকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ফেরার আদেশ দেওয়া হয়। তবে তিনি ফিরে আর মন্ত্রণালয়ে যোগ দেননি।
বিবিএস একাদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তার ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পরিচিতি পাওয়া পেশাদার কূটনীতিক সাইদা মুনা ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিজেকে করিৎকর্মা হিসেবে প্রকাশ করতে এই কূটনীতিক ছিলেন দারুণ তৎপর। তার মেয়াদে হাই কমিশনকে ‘পার্টি অফিসে’ পরিণত করা হয়েছিল বলে বিএনপি সমর্থক প্রবাসীরা অভিযোগ করেন।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হাই কমিশনে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নামিয়ে ফেলেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে সে সময় হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিমকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
যুক্তরাজ্যে মিশনে যাওয়ার আগে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সামলেছেন বিএসএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের একাদশ ব্যাচের এই কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ ও বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক লন্ডন হাই কমিশন ও নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সাইদা মুনা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেমিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়ার পর তাসনিম ইউনিভার্সিটি অব অব লন্ডন থেকে পাবলিক পলিসি ও ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে।
জলবায়ু কূটনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য সাইদা মুনাকে ‘ডিপ্লোম্যাট অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ দেয় যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘ডিপ্লোম্যাট’ ম্যাগাজিন।
