শনিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের নিয়ন্ত্রণে জমি দখলের চেষ্টা

মো. শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডের কুলগাঁও এলাকার বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেনের শীতল আবাসিকে কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের নিয়ন্ত্রণে বিরোধপূর্ণ জায়গা দখলের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্রের যোগসাজশে কোটি টাকা মূল্যের ওই জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জায়গার মালিক মৃত মাস্টার মো. ইসলাম মিয়ার ছেলে বাহরাইন প্রবাসী মো. আকতার মিয়া। গত আগস্টের ১১ তারিখে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ চট্টগ্রামে চারজনকে আসামি করে মো. আকতার মিয়ার স্ত্রী সাজেদা আক্তার একটি সি আর মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং ৪৮৬/২০২২ (বায়েজিদ বোস্তামী) । মামলার আসামীরা হলেন ১/মো. সারোয়ার, পিতা মো.মুসলিম মিয়া, ২/মো.শোয়াইব মিয়া, পিতা:মৃত কবির আহমদ, ৩/মো. আলমগীর, পিতা:মৃত জহির আহমদ, ৪/মো. সাহেদ, পিতা: মৃত নুরুল কবির। অভিযোগ চট্টগ্রাম শহরের কুলগাঁও মৌজার বিএস ২৫২২ খতিয়ানভুক্ত ৬৫৮৬ নং দাগের ছয় শতাংশে (তিন গন্ডা) এবং বিএস ২৫২২ খতিয়ান ভুক্ত ৬৫৮৯ নং দাগে আট শতাংশে (চার গন্ডা) জায়গা ক্রয় সূত্রে আমার স্বামী আকতার মিয়া বর্তমান মালিক। এই জায়গা নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে আদালতে মামলা চলছে। মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার বায়েজিদের কুলগাঁও এলাকার মো. শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ার তার দলবল নিয়ে বিরোধপূর্ণ জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের লোকজন যাতে এই বিরোধপূর্ণ জায়গা দখল করতে না পারেন সেজন্য বাহরাইন প্রবাসী আকতার মিয়ার স্ত্রী সাজেদা আক্তার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ চট্টগ্রামে মামলাটি দায়ের করেছিলেন। এর আগে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চট্টগ্রাম মহানগর আদালতে মো.মুসলিম মিয়া বাদী হয়ে মো. আকতার মিয়াকে আসামি করে আদালতের মাধ্যমে বিরোধপূর্ণ জমির ওপর ১৪৫ ধারা জারি করে। পরবর্তীতে আদালত ১৪৫ ধারা জারি বাতিল করে প্রবাসী মো. আকতার মিয়ার পক্ষে আদেশ দেন। বর্তমান জায়গার মালিক আকতার মিয়া জানান, আমি ২০০৪ সালে করিম আওয়ান চৌধুরীর কাছ থেকে ১৪ শতক (সাত গন্ডা) জায়গা খরিদ করি,যাহা বর্তমানে আমার নামে বিএস খতিয়ান ও চলতি বছরের খাজনাও পরিশোধ করা আছে। কিন্তু ১৯৯১ সালে সালে মুসলিম মিয়া জায়গাটি করিম আওয়ান চৌধুরীর কাছে বিক্রি করে দেন। পরবর্তীতে প্রবাসী আকতার মিয়া বলেন, ২০০৪ সালে খরিদকৃত জায়গাটি বিগত আঠারো বছর ধরে আমার দখলে আছে এবং ওই জায়গাতে কৃষি চাষাবাদ করিয়া আসিতেছে। তিনি আরো বলেন,আমার দাগের জায়গার কিছু বাকি অংশ শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ার মিলিত হয়ে ওয়ারিশ দাবি করে ২০১৮ সালে পুনরায় জায়গাটি বিক্রি করেন । পরবর্তীতে দীর্ঘ একত্রিশ বছর পর ২০২২সালে আবার সেই দাগ গুলোর উপর মুসলিম মিয়া গংদের কাছ থেকে শোয়াইব গংসহ, কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ার মোক্তারনামা নেন। বর্তমানে কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ার এবং শোয়াইব গংসহ ভূমি দস্যুরা আকতার মিয়াকে জায়গা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি প্রতিনিয়ত দিয়ে আসছে। এমনকি আকতার মিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে বড় ধরনের ক্ষতি করার ভয়-ভীতিও প্রদর্শন করে যাচ্ছেন তারা।

আদালতের নিদের্শের পরও শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের লোকজন বারবার জায়গা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মো.আকতার মিয়া ২১শে অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার বায়েজিদ বোস্তামী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যাহার ডায়েরি নং ১৩৮৫। তিনি অভিযোগ করেন, আমার খরিদকৃত জায়গার মধ্যে শোয়াইব গং ও কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারের লোকজন অবৈধভাবে টিন দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে । এমনকি আমার জায়গার মধ্যে আমি বাউন্ডারি তৈরি দিতে গেলে প্রতিনিয়ত তারা বাধা প্রদান করছে । মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় শোয়াইব গংসহ স্থানীয় প্রভাবশালী একটি ভূমিদস্যু চক্রের সহায়তায় জায়গা দখলের পাঁয়তারা করছে।

এ বিষয়ে শোয়াইব গং এর কিশোর গ্যাং লিডার সারোয়ারকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমার বাবা মুসলিম মিয়া ১৯৯১সালে আমার ফুফু এবং বাকি চাচাদেরকে না জানিয়ে করিম আওয়ান চৌধুরী কাছে জায়গা বিক্রি করেছিলেন এবং ২০০৪ সালে আমারই চাচাতো ভাই আকতার মিয়া, করিম আওয়ান চৌধুরী কাছ থেকে ১৪ শতাংশ (৭ গন্ডা) জায়গা খরিদ করেছিলেন।

সারোয়ার বলেন, এই দাগগুলোতে আমাদের ওয়ারিশদের জায়গা রয়েছে। তাই আকতার মিয়ার খতিয়ানের বিরুদ্ধে অক্টোবরের ৭ তারিখে হাটহাজারী ভূমি অফিসে একটি অভিযোগ দায়ের করি। যেহেতু বর্তমানে এ জায়গা সম্পর্কে আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে, আদালত যা সিদ্ধান্ত দেবে তা আমরা অবশ্যই মেনে নেব।

এ বিষয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার তদন্তকারী অফিসার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুর নবী বলেন, বিরোধপূর্ণ জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *