শনিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ট্রাস্ট্রিবোর্ডের চেয়ারম্যান পলাতক, অব্যাহতি পেতে নানামূখী তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রিবোর্ডের চেয়ারম্যান ও মামলার ১ নম্বর আসামি পলাতক আজিম উদ্দিন আহমেদ মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে নানামূখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যান, চার ট্রাস্টিসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেছে হাই কোর্ট।

চার ট্রাস্ট্রি রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ কারবন্দি থাকলেও মামলার ১ নম্বর আসামি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ এখনো পলাতক রয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কয়েকবার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর এই মামলা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে নানা মূখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রধান আসামি আজিম উদ্দিন আহমেদ ও অন্যরা । এর মধ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে আশাহত হন অর্থ আত্মসাতের দায়ে অভিযুক্ত ট্রাস্ট্রিরা। ট্রাস্ট্রিদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নথি জালিয়াতির ঘটনা, জঙ্গী অর্থায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে বিলাসবহুল গাড়ী ক্রয়সহ নানা অভিযোগ থাকায় নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকায় নিজেদের এই ঘটনায় জড়াতে চান না সরকার সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করায় দেশব্যাপী সমলোচিত অর্থ আত্মসাতের এই মামলায় নিজেদের জড়াতে চান না সংশ্লিষ্টরা। সূত্রে জানা যায়, সরকার সংশ্লিষ্টদের আনুকূল্য না পেয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দেশত্যাগী এক ফেসবুক অ্যাকটিভিস্টের মাধ্যমে রাষ্ট্র-বিরোধী প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন অভিযুক্ত ট্রাস্ট্রিরা।

আগামী ২৫ জুলাই এই মামলা শুনানীর দিন ধার‌্য রয়েছে। এর আগে গত ২২ মে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টি রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদের আগাম জামিন আবেদন খারিজ করে পুলিশে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্ট আদেশে বলেন, বর্তমান সময়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার খুনের চেয়ে ভয়াবহ অপরাধ। জামিন আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। এ ছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য কারণ তাঁরা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো।

প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কয়েকজন ট্রাস্টির দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে ওঠা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান ও তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয় দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের মে মাসে ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়টির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী এটি একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সুপারিশ/অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্যের সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অন্যায়ভাবে লেনদেন হয়েছে।

আরো বলা হয়, অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। এরপর আবার নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। অর্থাৎ অবৈধ অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন।

এজাহারে বলা হয়, বেআইনি কার্যকলাপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশ্বাস ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে লাভবান হয়ে বেআইনি কার্যক্রম করে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়ায় এ ছয়জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারাসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

যায়যায়কাল/২১জুলাই২০২২/কেএম

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *