রবিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ১২ মাস ব্যাপী আয়োজনে নড়াইলে দিনব্যাপী কমর্সূচি পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ১০ আগস্ট ২০২৩, বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান-এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে তাঁর জন্মস্থান নড়াইলে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

নড়াইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে শুরু হলো বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান-এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানমালা। সকাল ১১.০০ টায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ চেতনা চত্বর, নড়াইলে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ ও একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নড়াইলের জেলা প্রশাসকসহ দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে আগত বরেণ্য চারুশিল্পীবৃন্দ।

সকাল সাড়ে এগার টায় শিল্পী এস এম সুলতানের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অপর্ণ করা হয়। পরে শিল্পী এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের উপর শিশুদের অংকিত চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয় শিশু স্বর্গ মিলনায়তনে। সারাদেশের ১৯ জন বরেণ্য শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় আর্টক্যাম্প ও শিল্পীদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হয় শিশু চিত্রকর্মশালা। এ কর্মশালায় অংশ নেয় ২ শতাধিক শিশু। ১৯ জন দেশ বরেণ্য শিল্পীর অধীনে শিশুদের এ কমর্শালার আয়োজন করা হয়। বরেণ্য শিল্পী হামিদুজ্জামান খান এই চিত্রকরমশালার উদ্বোধন করেন। আর্টক্যাম্পে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অংশগ্রহণকারী বরেণ্য শিল্পীরা হলেন, শিল্পী হামিদুজ্জামান খান, শিল্পী আব্দুল মান্নান, শিল্পী রোকেয়া সুলতানা,শিল্পী নাইমা হক, শিল্পী আইভি জামান, শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী, শিল্পী সৈয়দা মাহবুবা করিম, শিল্পী নাজমা আক্তার, শিল্পী সমীরণ চৌধুরী, শিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস, শিল্পী নিখিল চন্দ্র দাস, শিল্পী বলদেব অধিকারী,শিল্পী সুশান্ত অধিকারী, শিল্পী সমীর মজুমদার, শিল্পী সমীর বৈরাগী, শিল্পী অনাদি বৈরাগী, শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম, শিল্পী নজরুল ইসলাম অগ্রানী, শিল্প সুফিয়া বেগম। শিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে পরবর্ীতে প্রদশর্নীর আয়োজন করা হবে।

বিকাল তিন টায় অনুষ্ঠিত হয় শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা । শিল্পী এমএম সুলতানের গড়ে তোলা ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান ‘শিশু স্বর্গ’, নড়াইলে এটি অনুষ্ঠিতি হয়। পরে বিকেলে শিশু ও বরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্টিত হয় চিত্রা নদীতে নৌকা ভ্রমণ। নৌ ভ্রমণে অংশগ্রহণ করে শিল্পীরা নিজেদের উচ্ছাস প্রকাশ করেন। শিল্পী হামিদুজ্জামান খান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এ আয়োজন নিয়ে প্রসংশা করে, প্রতিবছর এ আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কথা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সন্ধ্যা ৬ টায় আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী এসএম সুলতানের চিত্রকর্মের পর্যালোচনা (জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইল)। সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইলে। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন খলিল আহমদ, সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

উদ্বোধন করেন হাসনাত আবদুল হাই, বিশিষ্ট লেখক ও শিল্প সমালোচক। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী, জেলা প্রশাসক, নড়াইল। এবং সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম।

আলোচনা শেষে সন্ধ্যা ৭.০০ টায় প্রামাণ্যচিত্র ‘আদমসুরত’ প্রদর্শিত হয়। ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সাত বছর ধরে এস এম সুলতানের উপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয় আদম সুরত। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের প্রযোজনা এবং পরিচালনায় এই প্রামাণ্যচিত্রে সুলতানের দৈনন্দিন কর্মজীবন তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি এবং কৃষিচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। স্থান: জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন, নড়াইল।

জীবনের মূল সুর-ছন্দে যিনি খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন, আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, দ্রোহ-প্রতিবাদ, বিপ্লব-সংগ্রাম এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকার ইতিহাস যার শিল্পকর্মকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। যাঁর ছবিতে গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণতা, প্রাণপ্রাচুর্যের পাশাপাশি শ্রেণির দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফুটে উঠে, বিশ্বসভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে গ্রামের মহিমা উঠে এসেছে এবং কৃষককে এই কেন্দ্রের রূপকার হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন যিনি, তিনি বিশ্ব বরেণ্য শিল্পী এসএম সুলতান। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট শেখ মোহাম্মদ সুলতান তৎকালীন পূর্ব বাংলার নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি প্রাকৃতিক নৈসর্গ্য এবং প্রতিকৃতি আঁকতেন। তার আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে সিমলায়। সত্তরের দশকের শুরুর দিকে তিনি নড়াইল জেলার পুরুলিয়া গ্রামে থাকতেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তার কিছু শুভানুধ্যায়ী তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তার আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর সুলতানের প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। শিল্পকলা একাডেমির প্রদর্শনীতে তাঁর ছবির মহিমা নতুন করে প্রস্ফুটিত হয়। এই ছবিগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিশ্বের কেন্দ্র হচ্ছে গ্রাম আর সেই কেন্দ্রের রূপকার কৃষককে আপন মহিমায় সেখানে অধিষ্ঠিত দেখা যায়। গ্রাম ও গ্রামের মানুষ ছিলো তার শিল্পকর্মের অনুপ্রেরণা আর উপকরণ ছিলো কৃষক এবং কৃষকের জীবন চেতনা। এস এম সুলতান তেলরঙ এবং জলরঙ-এ ছবি আঁকতেন৷ পাশাপাশি রেখাচিত্র আঁকতেন ।শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং যশোরে চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সুরসাধক এবং বাঁশিও বাজাতেন। ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১০ অক্টোবর ১৯৯৪ সালে বিশ্ববরেণ্য শিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান মৃত্যুবরণ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ