
পাভেল ইসলাম মিমুল, উত্তরবঙ্গ: খুলনার ফুলতলা উপজেলার তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী বি এম সেলিম রেজার বিরুদ্ধে পাহাড়সম অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির প্রমাণ উঠে এসেছে বিশেষ অনুসন্ধানে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বিশ্বাসের ছেলে সেলিম রেজা। ০২/০৫/২০১২ইং সালে খুলনার ফুলতলা উপজেলা পরিষদে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর চাকরিকালীন সময় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে দুর্নীতি অনিয়ম করে দিনের পর দিন সম্পত্তির পরিমাণ ও ক্ষমতা ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে। ছয় বছরের ব্যবধানে এক কোটি ১০ লক্ষ টাকার সম্পদ গড়েছেন শুধুমাত্র ফুলতলাতেই।
সেলিম রেজা খুলনার ফুলতলা দামোদর ৮ নং ওয়ার্ডে ২৬/৮/২০১৯ইং সালে ৫৬ লক্ষ টাকা দিয়ে জায়গাসহ একটি বাড়ি কিনেন এবং খুলনার শিরোমনি হাইওয়ের পাশে ডাকাতিয়া বিলে ১৮/০৫/২১ ইং সালে ২০ লক্ষ টাকার জমি দুর্নীতি করে ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে জোর জুলুম করে লিখে নেন মাহাতাব কাজীর কাছ থেকে। এছাড়া ০৩/ ১০/ ২০২৩ ইং সালে খুলনার ফুলতলা বাজার সংলগ্ন মিশ্রি দেওয়ান শাহ রোডে দুটি দোকান ক্রয় করেন। একটি ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা ও আরেকটি ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেন সেলিম রেজা। এছাড়াও দুর্নীতি করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অর্থ বছরের ২০২২ – ২৩ এর সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সই জাল করে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ১৩০ টাকা উত্তোলন করেন সেলিম রেজা। ২০১৮ – ২০১৯ অর্থ বছরের দুর্যোগ সহনীয় বরাদ্দকৃত ঘর আসে অসহায় মানুষদের জন্য। তার মধ্য একটি ঘর আসে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের নামে। পরবর্তীতে সেখানে সেলিম রেজা দুর্নীতি করে বরাদ্দকৃত ঘরটি নেন তার শাশুড়ির নামে। কিন্তু এখানে আরো একটি দুর্নীতি করে সেলিম রেজা।
জানা যায়, তার শাশুড়ির অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রাম ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। তবে বরাদ্দকৃত ঘরটি করেছেন তার জামাই সেলিম রেজার বাড়ির ভিতরে। এ যেন মগের মুল্লুক হয়ে পড়েছে। যেন দেখার কেউ নেই।
এতো এতো দুর্নীতি অনিয়মের কারণে ফুলতলা উপজেলার সাধারণ মানুষ সেলিম রেজার বিরুদ্ধে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের নির্বাহী অফিসারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এমন একটি অভিযোগ করেন ফুলতলা ৪ নং ইউনিয়ন পরিষদের ৪,৫,৬ এর সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচিত সদস্য রিক্তা বেগম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর রিক্তা বেগম অভিযোগে লিখেন, আমি মোছাঃ রিক্তা বেগম, ফুলতলা ৪ নং ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা নির্বাচিত সদস্য। ২০২৩ – ২০২৪ ইং অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প এক লক্ষ ৯০ হাজার পিআইসির একটি ড্রেন প্রকল্প আমাকে সভাপতি করে কাজটি বরাদ্দ দেয়া হয়। এবং আবাসন প্রকল্পের ৩টি বাড়ি আমার নিয়ন্ত্রণধীন ৪ নং ওয়ার্ড এর ৩ জন গৃহীনের জন্য বরাদ্দ হয়। তাদের নাম যথাক্রমে কোকিলা বেগম, কাজল খাতুন ও হাবিবুর রহমান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে সেলিম রেজাসহ প্রকল্পের লোকজন তদন্তে এসে উপযুক্ত গৃহহীনদের সাথে সরকারি ঘর পেয়েছে এই মর্মে যাবতীয় কাগজপত্র আইডি কার্ডসহ অন্যান্য তথ্য নিয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রত্যেকের কাছে সেলিম রেজা ঘর পাইয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ দাবি করে। কিন্তু হতদরিদ্র গৃহহীন হওয়ায় দাবিকৃত অর্থের জোগান না দিতে পারায় তালিকায় নাম থাকা স্বত্বেও তারা ঘর পাইনি।
রিক্তা বেগমের অভিযোগ, এছাড়াও ২০২০ ইং সালে একটি ডিপ টিউবওয়েল এর আবেদন করতে গেলে সেলিম রেজা টিউবওয়েল পাশ করে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা দাবি করে। সেই টাকা আমি তাকে প্রদান করি। কিন্তু এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও কোন হদিস নেই।
এছাড়া নানান দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। আরো অনেকেই এমন সেলিম রেজার দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর।
ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর সেলিম রেজার দুর্নীতি নির্মূল ও সাধারণ মানুষ এর অধিকার ফিরিয়ে দিতে সমাধান চেয়ে লিখিত অভিযোগপত্র সহ সকল প্রমাণ এর অনুলিপি সংযুক্তি করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।