চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুরের মেঘনায় সারবাহী জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের লাশ নিতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সামনে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। এদিকে এ ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাতটি লাশ সোমবার রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে আনা হয়। খোঁজ পেয়ে আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে লাশ নিতে হাসপাতালে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। কিন্তু ময়নাতদন্ত না হওয়ায় তাঁরা লাশ নিতে পারছেন না।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ আখন্দ বলেন, ‘রাতে লাশগুলো আসার পর আমরা সাতটি লাশের সুরতহাল শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছি। ময়নাতদন্ত ও আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবে পুলিশ।’
জাহাজের নিহত লস্কর শেখ সবুজের (২৭) ছোট ভাই ও জাহাজের নিহত মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার (৬৫) ভাগনে ফরিদপুরের সাদিকুর রহমান হাসপাতালের সামনে বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে লাশগুলো নিতে এসে দেখলাম, সবার মৃত্যু একই ধরনের আঘাতে হয়েছে। আমরা এতে মনে করছি, এটি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। আমরা এ জন্য প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’
ওই জাহাজের ইঞ্জিনচালক নড়াইলের লোহাগড়ার নিহত সালাউদ্দিন মোল্লার (৪০) চাচাতো ভাই ও আরেক জাহাজের মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা সোমবার দুপুরে ফেসবুকের মাধ্যমে খবর পাই, আল–বাখেরা জাহাজে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। খবর পেয়ে আমরা আজকে লাশ নিতে এসেছি।’ তিনি মনে করেন, এটা কোনো ডাকাতি ছিল না। কারণ, দুর্বৃত্তরা হত্যার পর কোনো কিছু নেয়নি।
তার অভিযোগ, এটি একটি পরিকল্পত ঘটনা। চাঁদপুরের এই নৌ রুটে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলে। বিশেষ করে যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা না দিলে মারধর করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনও জানে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এ জন্য নিরুপায় হয়ে সবাই চাঁদা দিয়ে থাকেন। হয়তো সেই চাঁদাবাজেরাই এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।
মাগুরার মোহম্মদপুর এলাকার নিহত মাজেদুল ইসলামের (১৭) বাবা আনিসুর রহমান সন্তানের লাশ দেখে চিৎকার করে মাটিতে গড়াগড়ি করছিলেন।
স্বজনেরা বলেন, এ ঘটনায় বেঁচে থাকা ফরিদপুরের জুয়েল (৩৫) একমাত্র বলতে পারবেন, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত।
চাঁদপুর নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা করতে পারিনি। তবে প্রক্রিয়া চলছে। তবে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ পৃথক তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। দুপুরের মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’
এদিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানান, এমভি আল–বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও যুগ্ম সচিবকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।