
নুরুল ইসলাম, গাইবান্ধা: গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের উজিরধরনীবাড়ী গ্রামে পাকা রাস্তা সংলগ্ন প্রত্যান্ত পল্লী ও কৃষি জমির উপর অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে এমজিএম নামে একটি ইটভাটা। ১শ’ গজ পার্শ্বে রয়েছে আরো একটি ইটভাটা। মানছেন না ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ সনের ৫৯ নং ধারা। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন কি? প্রশ্ন ভুক্তভোগী সচেতন এলাকাবাসীর।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, উক্ত ইটভাটাটি উজিরধরনী বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ঘনবসতিপূর্ণ ও পাকা রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত। ভাটার মালিক ৯ এর ৫(১) ধারা ভঙ্গ করে অন্যন্য কৃষি জমির মাটি কেটে কাকঁড়া দিয়ে ভাটায় আনছেন। এ ছাড়াও কয়লার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ নাই। যা নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত সালফার, আ্যশ, মারকারি বা অনুরূপ উপাদান সম্বলিত কয়লা জ্বালানি হিসেবে (আমদানি করে) ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কয়লা পোড়ানোয় প্রচুর পরিমাণে ছাই তৈরি হয়। অন্যদিকে ইটভাটা থেকে বায়ুমণ্ডলে দূষিত উপাদানও যোগ হচ্ছে। এসব দূষিত উপাদানের মধ্যে পার্টিকুলেট ম্যাটার, কার্বন মনোঅক্সাইড, সালফার অক্সাইড ও কার্বন ডাইঅক্সাইড প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে। যদি এই দূষিত উপাদানের নির্গমন বায়ুমণ্ডলে অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে নাকচ করে দেওয়া যায় না।
ইটভাটা থেকে নির্গত এই দূষিত উপাদান মানবদেহে শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে রেসপিরেটরি সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ইটভাটার আশপাশে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। বায়ুতে মাত্রাতিরিক্ত সালফার ডাইঅক্সাইডের উপস্থিতির কারণে মানুষ চোখ, নাক, গলাসহ অ্যাজমাটিক সমস্যার সন্মুখীন হচ্ছে। মোটা দাগে বলা যেতে পারে, বায়ুতে দূষিত উপাদানের উপস্থিতিতে ফুসফুসে ক্যান্সার, হার্ট অ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, কৃষি জমির ওপরও ইটভাটার ঋণাত্মক প্রভাব রয়েছে। সাধারণত জমির উপরের মাটিতে জৈব পদার্থের উপস্থিতির কারণে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যদি ওই উপরের মাটি প্রতিনিয়ত সরিয়ে ইট তৈরিতে ব্যবহার হয়, তাহলে জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন হ্রাস পাবে। মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় ভবিষ্যতে মোট কৃষিজ উৎপাদনের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ সংক্রান্ত একটি খবর গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি দৈনিক যায়যায়কালে প্রকাশ হলেও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে গাইবান্ধা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক শের আলম উক্ত ইটভাটার ছাড়পত্র না থাকায় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেননি।
ইটভাটা আইন ও পরিবেশ ছাড়পত্র সম্পর্কে ভাটার ম্যানেজার বলেন, ‘ভ্যাট ট্যাক্স ও এলারফান্ডে টাকা দিয়ে চালানো হয়।’ এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অতি দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিবেন এটাই ভুক্তভোগী মহলের প্রত্যাশা।