রবিবার, ১৫ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তালায় নতুন উপায়ে ঘরে ঘরে ডাকাতি

বি এম বাবলুর রহমান, তালা (সাতক্ষীরা): তালায় ডাকাতির নয়া কৌশল অজ্ঞান পার্টির কবলে সর্বশান্ত হচ্ছে মানুষ। প্রায় রাতে কোথাও না কোথাও খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ দিচ্ছে।

তরকারি, দুধ, ডাল এ ধরনের খাদ্যের সাথে সুকৌশলে পয়জনিং করছে একটি ডাকাত চক্র। বিষক্রিয়া শুরু হয়ে অচেতন হয়ে পড়লে ঘরে প্রবেশ করে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা সহ সর্বশান্ত করছে প্রতিটি পরিবারকে।

ক্রমান্নয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতির আশংকায় উৎকণ্ঠায় প্রতিটা রাত্র নিদ্রাহীন ভাবে পার করছে গ্রামের প্রতিটা মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম করতে না পারায় অপরাধ জগতের সদস্যরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, শুক্রবার মাঝিয়াড়া আব্দুর রহমান গাজীর কনিষ্ঠ পুত্র মোঃ কামরুল গাজী(৪৫)কে দুধের সাথে পয়জনিং করে চিহ্নিত ডাকাত চক্র। দুধ খাওয়ার সাথে সাথে বুক জ্বালা পোড়া করতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তালা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। কামরুল গাজীর স্ত্রী খাবার না খাওয়ার কারণে ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয় চক্রটি।

ইতিপূর্বে মাঝিয়াড়া সুনিল দেবনাথের বাড়িতে তরকারি, ডাল এর সাথে পয়জনিং করে। এতে সুনিল দেবনাথ, অসিম দেবনাথ, তার পুত্র অমিত দেবনাথ, সুনিল দেবনাথের স্ত্রী বিজলী দেবনাথ উক্ত খাবার খেয়ে সাথে সাথে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। অসিম দেবনাথের স্ত্রী রাতের খাবার না খাওয়ায় উক্ত বাড়িতে ডাকাতি করতে পারেনি। তাদের তালা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।

মাঝিয়াড়া গ্রামের ডাঃ সৈয়দ মনজু ও তার স্ত্রী খাবারের সাথে পয়জনিং করে উক্ত খাবার খেয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাদের বাসা থেকে ২০ ভরি সোনা, নগদ টাকা মিলিয়ে অনুমান প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। সকালে তার ভাই-ভাতিজারা তাদের সংজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখে তাদের তালা হাসপাতালে ভর্তি করে।

সম্প্রতি দক্ষিণ আটারই গ্রামের আব্বাস আলী সরদার এর বাড়িতে রাতের খাবারের সাথে পয়জনিং করে সেই খাবার খাওয়ায় তারা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে কুরবানির পশুর ক্রয়ের টাকা সহ ১ লক্ষ টাকা, একটি ডিসকভার মোটরসাইকেল যার অনুমান মূল্য দেড়লক্ষ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায় চক্রটি।

মধ্য আটারই আবুল কাশেম শেখ এর বাড়িতে সংজ্ঞাহীন করে ১ টি ল্যাপটপ, নগদ ৫০ হাজার টাকা ডকাতি করে নিয়ে যায়। ভায়ড়া গ্রামের করিম শেখ বাড়িতে খাদ্যের সাথে পয়জনিং করে ওই খাদ্য খেয়ে পরিবারের সকলকে অচেতন হয়ে পড়ে। ওই বাড়ি থেকে ১ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার ডাকাতি করে নিয়ে যায়।

উত্তর আগোলঝাড়া গ্রামের মোঃ আরিজুল শেখ এর পরিবারকে চেতনানাশক পয়জনিং খাবারের সাথে মিশিয়ে দেয় সেই খাবার খেয়ে পরিবারের সকলে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে গরু বিক্রয়ের ৩ লক্ষ টাকা সহ বাড়ির সাথে থাকা দোকানে ডাকাতি করে নিয়ে যায়। জেয়ালা গ্রামের হরে কৃষ্ণ মনির বাড়িতে খাবারের সাথে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে দেয়। সেই খাবার খেয়ে তারা সকলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

তেঁতুলিয়া গ্রামের তৌফিক ইমরান এর বাড়িতে খাবারের সাথে পয়জনিং করে। তৌফিকের স্ত্রী ও সন্তান সেই খাবার খেয়ে সংজ্ঞানহীন হয়। তৌফিক সরকারী সমাজ সেবা অফিসে চাকরি করেন। সে খাবার না খাওয়ায় তার বাড়িতে ডাকাতি করতে ব্যর্থ হয়। এভাবে প্রতি রাতে তালা থানায় কোন না কোনো গ্রামে খাবারের সাথে চেতনানাশক পয়জনিং করে ডাকাতির নয়া কৌশলে কোটি কোটি টাকা ডাকাতি করা হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, এই চক্রের সদস্যদের মধ্যে কেউ না কেউ নানা কৌশলে প্রশাসনের সাথে সখ্যতা বজায় রেখে একের পর এক নয়া কৌশলে ডাকাতি করছে চক্রটি। গ্রামের নিরীহ মানুষ সম্পদের ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মাদক, জুয়া সিন্ডিকেট চক্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপরাধ জগতের অভয়ারণ্য তৈরি করছে তালা থানা এলাকা জুড়ে। কারা এই চক্রের সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

তালা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাইন উদ্দিন জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। অপরাধীদের চিহ্নিত করতে কার্যক্রম চলছে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ