
আনোয়ারুল ইসলাম রনি, রংপুর: শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও সমাজবিরোধী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতে কুড়িগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমধর্মী ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কর্মসূচি।
সোমবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিলারাম স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের উদ্যোগ নেয় ইয়ুথ ক্যারিয়ার অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট হাব (ওয়াইসিডিএইচ)।
দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে অংশ নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী। শুরুতে অধ্যক্ষ’র শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর মূল পর্ব—যেখানে শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ, সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন, প্রযুক্তিনির্ভর যুগে দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা এবং সামাজিক অবক্ষয়ের কুফল নিয়ে আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন কুড়িগ্রাম নিলারাম স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ পরমেশ্বর চন্দ্র মহন্ত।
তিনি বলেন, “বর্তমান তরুণদের কেবল বইয়ের জ্ঞান নয়, প্রয়োজন বাস্তবমুখী দক্ষতা, আত্মনির্ভরতা ও নৈতিক দৃঢ়তা। এই আয়োজন শিক্ষার্থীদের নতুনভাবে ভাবতে শেখাবে এবং অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে থাকতে অনুপ্রাণিত করবে। এই ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং প্রোগ্রাম শুধু কুড়িগ্রাম নয় তথা বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও সমাজসেবক মো. মাহবুবুর রহমান মোমিন।
তিনি বলেন, “ওয়াইসিডিএইচ’র উদ্যোগে আয়োজিত এই ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রামটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়। আজকের সমাজে নৈতিক অবক্ষয় এবং তরুণ প্রজন্মের বিপথগামীতার যে আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে, তা প্রতিরোধে এমন সচেতনতামূলক ও দিকনির্দেশনামূলক কার্যক্রমের বিকল্প নেই। এই ধরনের আয়োজন তরুণদের সঠিক পথ বেছে নিতে সহায়তা করে এবং তাদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। সমাজ গঠনে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
এই প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার্থীরা সরাসরি নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ক্যারিয়ার সংকট ও ব্যক্তিগত সমস্যা তুলে ধরেন। প্রশিক্ষকগণ ও কলেজের অধ্যক্ষ মহাদয় অত্যন্ত যত্নসহকারে তাদের উত্তর প্রদান করেন এবং উৎসাহ দেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার।
নীলারাম স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. হাই বলেন, “এই ধরণের কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওয়াইসিডিএইচ-এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, তারা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও নৈতিক উন্নয়নে এমন একটি সময়োপযোগী আয়োজন করেছে। নিয়মিত এই আয়োজনগুলো অব্যাহত থাকলে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধ থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
ওয়াইসিডিএইচ–এর প্রতিষ্ঠাতা এবং ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট মো. হানিফ আলী জানান, “আমরা বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষার্থী যদি নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন হয় এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে সে কখনোই মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং কিংবা সামাজিক অপরাধে জড়াবে না। আমাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্যই হলো তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করা। আমাদের তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। কিন্তু বর্তমান সময়ে তারা নানা বিভ্রান্তি, নৈতিক অবক্ষয় ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সঠিক পথ খুঁজে পেতে হিমশিম খায়। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্যারিয়ার সচেতনতার অভাব স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। ফলে তারা নিজেদের স্বপ্ন ও লক্ষ্য সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
এই প্রেক্ষাপটে ওয়াইসিডিএইচ-এর উদ্যোগে রংপুর বিভাগের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের সম্ভাবনা শনাক্ত করা, সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং একজন দায়িত্ববান, আত্মবিশ্বাসী ও নৈতিকতাসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিল সাংবাদিক ও সংগঠক আনোয়ারুল ইসলাম রনি।
তিনি জানান, এই ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে—তাদের আগ্রহ ও দক্ষতার সঙ্গে উপযুক্ত ক্যারিয়ার কীভাবে নির্ধারণ করতে হয়, কীভাবে উচ্চশিক্ষা ও পেশাগত জীবন গঠনে প্রস্তুতি নিতে হয়, এবং কীভাবে সমাজ ও জাতির জন্য ইতিবাচক অবদান রাখা যায়। আমি বিশ্বাস করি, এই কার্যক্রম শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্যই একটি আশার আলো হয়ে উঠবে। কারণ একটি সুসংগঠিত, সচেতন ও দিকনির্দেশিত তরুণ প্রজন্ম মানেই একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ এবং উন্নয়নমুখী সমাজ। তাই আমরা চাই, রংপুর বিভাগের প্রতিটি বিদ্যালয়, স্কুল কলেজে নিয়মিতভাবে এই ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম আয়োজন করা হোক— যাতে কোনো শিক্ষার্থীই পিছিয়ে না পড়ে, এবং তারা প্রত্যেকে হয়ে উঠতে পারে আলোকিত ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াইসিডিএইচ-এর ক্যারিয়ার কাউন্সেলর, দেবশ্রী ভট্টাচার্য এবং মহনা মৌ।
অভিভাবক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে—এ ধরনের আয়োজনের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক পরিসরে এমন কার্যক্রমের আয়োজনের প্রত্যাশা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সকলেই।
শিক্ষা অনুরাগীদের মতে, ওয়াইসিডিএইচ-এর এই উদ্ভাবনী উদ্যোগ কেবল একটি কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ নয়—বরং এটি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার এক বাস্তব ভিত্তি। এটি তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক একটি মাইলফলক হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই তারা মনে করছেন।