বৃহস্পতিবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

, এর সর্বশেষ সংবাদ

পুঁজিবাজারে সালমান ও এস আলমের অনিয়ম বের করতে কমিটি

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: এবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আলোচিত ব্যবসায়িক গ্রুপ এস আলমের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অনিয়মের তদন্তে নেমেছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার আলোচিত ও প্রভাবশালী এ দুই ব্যবসায়ীর পুঁজিবাজারে কোনো অনিয়ম রয়েছে কি না তা দেখতে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ‘বিশদ অনুসন্ধানের’ জন্য সোমবার গঠিত এ কমিটিকে ৬০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র ও পরিচালক ফারহানা ফারুকী বলেন, ‘বিএসইসির কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের ৬০ দিনের মধ্যে বিশদ অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিতে কমিশন সময় দিয়েছে।’

কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির পরিচালক মোহাম্মাদ আবুল হাসান, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম এবং দুই সহকারী পরিচালক অমিত কুমার সাহা ও তৌহিদুল ইসলাম সাদ্দাম।

তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত বিএসইসির দেওয়া আদেশে বলা হয়, ‘সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ও এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতিতে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশদ অনুসন্ধান করার নির্দেশনা প্রদান করেন।’

ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ক্ষমতার পালাবদলের পর ১৩ অগাস্ট নৌ-পথে পালানোর সময় সালমান রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করার তথ্য দেয় পুলিশ। পরে একাধিক হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়।

অপরদিকে, সরকার পতনের পর থেকে দেশে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলমকে (এস আলম)।

সরকার পতনের পরপরই ব্যাংক খাতে আলোচনায় আসে এস আলম গ্রুপ। জোরজবরদস্তি করে পর্ষদের দখল নেওয়া ইসলামী ব্যাংকসহ শরীয়াহভিত্তিক অন্য ব্যাংক থেকে এস আলমসহ এ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সরানো হয়।

অন্যদিকে সরকারিসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে আরেক শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ নেওয়ার খবরও সামনে আসে। এ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমানকে সরানো হয় আইএফসি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে।

পরে সিআইডি অর্থপাচারের অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণের তথ্যেরভিত্তিতে এস আলম গ্রুপ ও বেক্সিমকো গ্রুপের নামে পৃথক অনুসন্ধানে নামার কথা জানিয়েছে।

সালমান ও এস আলমসহ তার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে আলোচিত এ দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশন।

ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, সংবাদমাধ্যমসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা। পুঁজিবাজারে তার প্রভাব নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের চার কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। আরেকটি কোম্পানি বেক্সিমকো সিনথেটিকস ডিলিস্টিং হয়েছে বছর দুই আগে। বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

অন্যদিকে এস আলম গ্রুপের কোম্পানি এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেড তালিকাভুক্ত রয়েছে।

এ দুই আলোচিত ব্যবসায়ী এবং তাদের পরিবারের সদস্য, স্বজন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠিানের পুঁজিবাজারে অনিয়ম খতিয়ে দেখার বিষয়ে বিএসইসির আদেশে বলা হয়, ‘গত ১৪ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় এস আলম গ্রুপ এবং সালমান এফ রহমানের অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সালমান এফ রহমান আশির দশক থেকেই শীর্ষস্থানীয় ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিত।

১৯৯৬ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিতে তার নাম এসেছিল। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ সুবিধা নিয়ে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে নাম কাটায়। ২০১১ সালে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে সালমান এফ রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

পত্রিকার খবরের সূত্র ধরে বিএসইসির প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, একসময়ের দেশের শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এর পর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ।

ঋণের যে তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে, ব্যাংক থেকে পাচার করা অর্থের প্রকৃত পরিমাণ তার চেয়ে বেশি বলেই মনে করেন কর্মকর্তারা। সংবাদে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি থেকে টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে।’’এমন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএসইসি এই কমিটিকে এসব ব্যক্তি ও তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কারণে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা দেখতে নির্দেশ দিয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ