
এম. নুরুল আলম সরকার: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ব বিরোধ এবং ছেলের সামনে মা’কে কটূক্তি করার জেরে রাতের বেলা টর্চলাইট জ্বালিয়ে বিবদমান দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৩০ জন এবং সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সরাইল উপজেলা সদরের চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলার মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার কেনাবেচা নিয়ে চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা চলছিল।
বুধবার সন্ধ্যায় চানমনিপাড়া গ্রামের মৃত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) গ্রামের অদূরে একটি চালকলে চাল ভাঙাতে যান। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোঘলটুলা গ্রামের যুবক তৌহিদ মিয়া হালিমা বেগমকে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করেন তার ছেলে সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে সাইফুল ও তৌহিদের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা পরে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই গ্রামের মাঝখানের সড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্ধকারে অনেকের হাতে ছিল টর্চলাইট। টর্চলাইটের আলোতে তারা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন সরাইল উপজেলার ইউএনও মোশাররফ হোসাইন, সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও এবং রাত ১০টার দিকে ওসি ইটের আঘাতে আহত হন। ইউএনও মোশাররফ হোসাইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি ডান হাঁটুর নিচে আঘাত পেয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওসি রফিকুল হাসান। তার ডান চোখের ওপরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার বলেন, সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ইউএনও মোশাররফ হোসাইন বলেন, কয়েক দিন আগে সরাইলে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। ঘটনা শুনে না গিয়ে পারলাম না। কথায় কথায় সংঘর্ষের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।