
পাভেল ইসলাম মিমুল উওরবঙ্গ: পরিচ্ছন্ন শহর রাজশাহীর সড়কগুলো ছিল প্রশস্ত, ঝকঝকে। তবে এখন খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কোনো সংস্কারকাজ হয়নি দীর্ঘ এক বছরে।
নগরীর অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টি হলে পানি জমে রাস্তার ওপরই যেন তৈরি হচ্ছে ছোট ছোট পুকুর। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়া উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ চলার কারণে নিচের সড়কগুলোও দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়,গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মতো রাজশাহী সিটির মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করা হয়। ১৯ আগস্ট করপোরেশনের দায়িত্ব নেন প্রশাসক। এরপর থেকে নগরীর সড়ক সংস্কারে কোনো কাজ করা হয়নি। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ না করা এবং সাম্প্রতিক টানা বর্ষণে সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো সংস্কার না হওয়ার কথা স্বীকার করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, মাঠপর্যায়ে জরিপ শেষে এক মাসের মধ্যে সংস্কারকাজের জন্য টেন্ডার ডাকা হবে।
রাজশাহী নগরীর ভদ্রা লেকের সামনে থেকে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার-পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ হয়েছে বড়জোর এক বছর। এরই মধ্যে সড়কটিতে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। চলাচলে মনোযোগ হারালেই ঘটে দুর্ঘটনা।
ভদ্রা লেকের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কের কিছুটা যেতেই দেখা গেল বেশ কিছু এলাকাজুড়ে বড় বড় গর্ত। এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, কন্ট্রাক্টর নামমাত্র কাজ করে টাকা নিয়ে গেছেন। তাই রাস্তা টেকেনি। প্রায়ই গাড়ি উল্টে যায়। চলাচল করতে প্রচণ্ড ভয় লাগে। ভদ্রা থেকে আমচত্বর পর্যন্ত পুরোটাই ভাঙা।
নগরীর বারোরাস্তার মোড়ের বাসিন্দা শুভ বলেন, এত সুন্দর রাস্তা! কিন্তু এক বছরও টিকল না। এটা তদন্ত করা উচিত কেন এমন হলো। নির্মাণে দুর্নীতি হলে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
নগরীর রাজপাড়া থানার কাঁঠালবাড়ী মোড় থেকে কাশিয়াডাঙ্গা সড়কটির প্রায় এক কিলোমিটার এখন চলাচলের অনুপযোগী। পুরো সড়কে বড় বড় গর্ত। কার্পেটিং উঠে গেছে। নগরীর কোর্ট স্টেশন মোড় থেকে লিলি হলের মোড় পর্যন্ত সড়কটিও বেহাল। বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকছে। নগরীর সিপাইপাড়া জেলখানার পেছন থেকে শ্রীরামপুর মোড় পর্যন্ত সড়কও চলাচলের প্রায় অযোগ্য।
নগরীর বেশ কিছু এলাকায় চলছে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ। সেসব এলাকার সড়কও চলাচলের প্রায় অযোগ্য। নগরীর বন্ধ গেট থেকে বিভাগীয় স্টেডিয়াম পর্যন্ত সড়কের দুই পাশেই খানাখন্দ। কাদামাটিতে একাকার। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। নগরীর ঘোড়া চত্বর থেকে দাসপুকুর মোড়, চারখুটার মোড় থেকে কাশিয়াডাঙ্গা থানা পর্যন্ত সড়কও বেহাল। নিউমার্কেট থেকে বিন্দুর মোড় রেলগেট হয়ে শালবাগান পর্যন্ত সড়কে প্রায় দুই বছর ধরে চলাচল করা দুষ্কর। ধীরগতিতে উড়ালসড়ক নির্মাণকাজ চলতে থাকায় এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। নগরবাসী বলছেন,এসব এলাকা ব্যস্ততম হওয়ায় উড়ালসড়ক করা হচ্ছে। কিন্তু এ নির্মাণকাজের কারণে তিন বছরের বেশি সময় ধরে নিচের সড়কগুলো নষ্ট হয়ে আছে। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় সড়কগুলোর সংস্কারও অনিশ্চিত হয়ে আছে। এরই মাঝে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলছে। নগরবাসী দ্রুত উড়ালসড়ক নির্মাণ শেষ করে সড়ক মেরামতের দাবি জানান।
এসব বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈন বলেন, নগরীর সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। মাঠপর্যায়ে জরিপ শেষে আগামী এক মাসের মধ্যে সংস্কারকাজের টেন্ডার করা হবে বলে জানান তিনি।